আগস্টের প্রথম সপ্তাহে দেশে আসছে প্রায় ১ কোটি ৬৯ লাখ ডোজ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা। কোভ্যাক্স সহায়তা থেকে ফাইজার, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে কেনা চুক্তির আওতায় ৫০ লাখ ডোজ সিনোফার্ম টিকা আসার কথা। দেশে টিকা আসার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হওয়ায় নিবন্ধনের বয়সসীমা ১৮-তে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে দেশে কোভ্যাক্স সহায়তা থেকে ফাইজারের ৬০ লাখ ডোজ, মডার্নার ৩০ লাখ ডোজ এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২৯ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। চীনের সঙ্গে কেনা চুক্তির আওতায় দ্বিতীয় চালানে একযোগে কিংবা ধাপে ধাপে ৫০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা আসার কথা রয়েছে। এ টিকা দুই ডোজের হিসাবে ৮৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ দিতে পারবে। দেশে এ পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ২ লাখ ৫২ হাজার ১৬৫ জন। এর মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকার দুই ডোজ দিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৮ জন। প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন ১৫ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫ জন। ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছেন ৪৬ হাজার ৯৮১ জন, মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭১ জন এবং সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছেন ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ জন। সব মিলিয়ে টিকা কর্মসূচির আওতায় এসেছেন ৬৬ লাখ ৩১ হাজার ১৩৪ জন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে এলে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১৫ লাখ মানুষ টিকা পাবেন। বর্তমানে দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। দেশের সব জেলা-উপজেলায় দেওয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা। এ ছাড়া সৌদি আরব ও কুয়েত প্রবাসীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘আমরা চিন্তা করছি টিকার জন্য বয়সসীমা আরও কমিয়ে আনা যায় কি না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। তাঁরও একটা নির্দেশনা আছে। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটিও গতকাল আমাদের জানিয়েছে ১৮ বছর এবং তার ঊর্ধ্বে টিকা দেওয়া যায় কি না। আমাদের ছেলেমেয়েদের তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজে পাঠাতে চাই। শিক্ষকদের টিকা দিচ্ছি। এখন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছে তাদেরও টিকার আওতায় নিয়ে আসব। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার সুযোগ করে দেব। কারণ তাদের জীবনের একটা বছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য, জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।’ গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ সম্প্রসারণ এবং ওপিডি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছেন, ‘দেশে এখন ৪৫ লাখ ডোজ টিকা মজুদ আছে। চীনে আরও দেড় কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দেওয়া আছে। এ মাসের শেষে সেখান থেকে কিছু টিকা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসার কথা রয়েছে। সরকারের কাছে প্রায় ৩ কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণ করার সক্ষমতা আছে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যায় এমন প্রায় দেড় কোটি এবং মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখার সুযোগ আছে ২০ লাখ ডোজ। বিএডিসিতে প্রায় ১ কোটি ডোজ টিকা রাখা যাবে। এ দুটি জায়গা হিসাব করলে প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি টিকা রাখার সুযোগ আছে আমাদের। বেসরকারি আরও কয়েকটি জায়গায় আমরা ১০-১৫ লাখ ডোজ টিকা রাখতে পারব। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরও কিছু ফ্রিজার কেনার। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ দেশে ২৬ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। শুরুতে ৪০ বছর বা এর বেশি বয়সীরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারতেন। ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ৩৫ বছর হলেই টিকার জন্য নিবন্ধন করা যাবে। সে অনুযায়ী যাদের বয়স ৩৫ বছর বা এর বেশি, কেবল তারাই সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েবসাইটে গিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। তবে মহামারী মোকাবিলায় সম্মুখসারির কর্মী, বেশ কিছু পেশাজীবী শ্রেণি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, প্রবাসী কর্মী এবং অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা নির্ধারিত বয়সসীমার বাইরেও নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন।
