শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

চলে গেলেন সাইমন ড্রিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন সাইমন ড্রিং

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর নেই। গত ১৬ জুলাই রুমানিয়ার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সাইমন ড্রিং রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ও বিবিসির হয়ে দীর্ঘদিন বৈদেশিক সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ  করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শোক জানিয়েছেন। সায়মন ড্রিং বাংলাদেশের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম বিদেশি সাংবাদিক যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে সারা বিশ্বে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা ও গণহত্যার কথা অবহিত করেন। কলম আর ক্যামেরা হাতে নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাংলাদেশিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন এই খ্যাতিমান সাংবাদিক। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে সাইমন ছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। পাকিস্তানের সামরিক আইন উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে ২৭ মার্চ ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ পাঠিয়েছিলেন বিখ্যাত ডেইলি টেলিগ্রাফে। যা প্রকাশিত হয় ৩০ মার্চ। সে রিপোর্ট সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সে রিপোর্টের আলোকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশাল এক জনমত সৃষ্টি হয় পৃথিবীজুড়ে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করার আগে ঢাকায় অবস্থানরত প্রায় ২০০ বিদেশি সাংবাদিককে আটকে ফেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে।

সব সাংবাদিককে হোটেল থেকে সরাসরি বিমানে তুলে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়, যাতে গণহত্যার কোনো সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারে বিশ্ব গণমাধ্যম। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। পাকিস্তানি সামরিক আইন অমান্য করে সাইমন ড্রিং লুকিয়ে পড়েন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। তাঁর শ্বাসরুদ্ধকর ৩২ ঘণ্টা কাটে হোটেলের লবি, ছাদ, বার, কিচেন প্রভৃতি স্থানে। পরে তিনি ঘুরে ঘুরে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন গণহত্যার বাস্তব চিত্র। ২৭ মার্চ কারফিউ উঠে গেলে সাইমন ড্রিং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি প্রভৃতি স্থান প্রত্যক্ষভাবে ঘুরে দেখেন। মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় ঢাকা ছাড়েন সাইমন। কিন্তু তাঁকে এয়ারপোর্টে নাজেহাল করা হয়। এমনকি তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়।

২০০০ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি গড়ে তোলার প্রধান কারিগর হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন সাইমন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই চ্যানেলটি। এদিকে ২০০২ সালের অক্টোবরে তৎকালীন সরকার সাইমন ড্রিংয়ের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাঁকে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

পরে ২০১২ সালে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় এই ব্রিটিশ সাংবাদিককে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায় ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম সাইমন ড্রিংয়ের। মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে তিনি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সাংবাদিক হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রকৃত বন্ধু এবং সহযোদ্ধার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর