সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন জিএসপি সুবিধা দেবে যুক্তরাজ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর এবার স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন জিএসপি সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে  যুক্তরাজ্য। এই প্রস্তাবে তিন ধরনের স্কিম পাঠিয়ে যুক্তরাজ্য বলেছে, এর যে কোনোটির একটি সুবিধা নেওয়া যাবে। বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা স্বল্পোন্নত দেশের জন্য যে এলডিসি ফ্রেমওয়ার্ক স্কিমটি আছে, তার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়ার জন্য দরকষাকষি করবে।

যুক্তরাজ্যের তিনটি স্কিমের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য। এই স্কিমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে ইবিএ বা অস্ত্র ব্যতীত বাকি সব পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে, যেটির নাম দিয়েছে এলডিসি ফ্রেমওয়ার্ক। বাকি দুটি স্কিম উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য যার প্রথমটির নাম জেনারেল ফ্রেমওয়ার্ক এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে এনহেঞ্চড ফ্রেমওয়ার্ক। এর মধ্যে প্রথমটি (বিশ্বব্যাংকের হিসাবে) নিম্ন-মধ্যম আয়ের  দেশগুলোর জন্য এবং দ্বিতীয়টি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দফতর (ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) থেকে সম্প্রতি কিছু প্রশ্নোত্তর দিয়ে সেটি পূরণ করে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলেছে। এই প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে তারা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা নির্বাচন করবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ, যেখান থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের কথা রয়েছে। আবার মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে স্বল্প-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ক্যাটাগরিতেও পড়ে বাংলাদেশ। ফলে ৩টি জিএসপি সুবিধার মধ্যে প্রথম দুটির যে কোনো একটি, অর্থাৎ এলডিসি ফ্রেমওয়ার্ক অথবা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য নির্ধারিত জেনারেল ফ্রেমওয়ার্ক স্কিম বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কী ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন ছিল। এর সমাধানে তারা সম্প্রতি কিছু প্রশ্নমালার সঙ্গে একাধিক জিএসপি স্কিমের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। এখন এর কোনটি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে সেটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই কমিটি গতকাল এ বিষয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নির্ধারিত এলডিসি ফ্রেমওয়ার্ক স্কিম সমর্থন করবে। পাশাপাশি এই স্কিমে থেকে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে কীভাবে আরও বেশি সুবিধা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দফতরের সঙ্গে দরকষাকষি করবে। কমিটির প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক এম হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবিত জিএসপি স্কিমটি ইইউর মতো (অস্ত্র ব্যতীত সব পণ্যে শূন্য শুল্ক) হলেও এখানে তারা আরও বেশি সুবিধা দেবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩টি সুবিধা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলো হচ্ছে : (১) ভ্যালু এডিশনে ছাড় : ইইউতে বর্তমানে ৩০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন করে জিএসপি সুবিধায় শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা মেলে। যুক্তরাজ্য বলেছে, নতুন জিএসপি স্কিমে তারা ২৫ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করলেই জিরো ট্যারিফ সুবিধা দেবে; (২) নুইসেন্স ট্যারিফ প্রত্যাহার : অনেক পণ্যে ১ থেকে ২ শতাংশ ট্যারিফ রয়েছে। যুক্তরাজ্য বলেছে, এলডিসি দেশগুলোর জন্য তারা এই ১ থেকে ২ শতাংশ নুইসেন্স ট্যারিফ প্রত্যাহার করে শূন্য করে দেবে; (৩) উত্তরণের সময়কাল বৃদ্ধি : বাংলাদেশ যেহেতু ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে। এই উত্তরণ প্রক্রিয়া টেকসই করার জন্য পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত এলডিসি সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে ইইউ। যুক্তরাজ্য নতুন জিএসপি স্কিমে এটি ৫ বছর পর্যন্ত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। অর্থাৎ ২০২৬ সালে উত্তরণের পরও ২০৩১ সাল পর্যন্ত এলডিসি স্কিমে জিএসপি সুবিধা মিলবে যুক্তরাজ্যে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির পরই বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাজ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি ডলারের পণ্য পাঠিয়েছে বাংলাদেশ যার সিংহভাগই তৈরি পোশাক। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেয়ে আসছে। ইইউর অধীন থাকায় এই সুবিধা দিয়ে আসছিল যুক্তরাজ্যও।

সর্বশেষ খবর