শনিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সংকটের সমাধান কোন পথে

শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটির পক্ষে নাগরিক সমাজ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সংকটের সমাধান কোন পথে

টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশন পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোনো কিছুতেই যেন থামছে না শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র আন্দোলন। বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবির আন্দোলন এখন পরিণত হয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো অনশন চালিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ বা অপসারণ ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণায় অনড় তারা। 

সিলেট সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছোটখাটো ছিল। কিন্তু উপাচার্যের ভুল সিদ্ধান্তই এটিকে বড় রূপ দিয়েছে। এখন চলমান সংকট নিরসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন,  সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিয়ে ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা এক দফা নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের দাবির পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। এই সংকটের জন্য উপাচার্যই দায়ী। তাই তার উচিত পদত্যাগ করে সংকট নিরসন করা। যদি পদত্যাগ করতে নাও চান তবে তিনি ছুটিতে যেতে পারেন। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। ফারুক মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ইস্যু খুব বড় ছিল না। সেটি পর্যায়ক্রমে বড় করেছে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছেন। একজন উপাচার্যের কাছ থেকে এমনটা আশা করা যায় না। এটা খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীরা তো তার সন্তানতুল্য। তিনি তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিএনপির সময় উপাচার্য অধ্যাপক মুছলেহ উদ্দিন আহমদকে ২২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তিনি ওই সময়ও পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকশন নিতে বলেননি। অথচ অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন অধৈর্য হয়ে তাড়াহুড়ো করে পুলিশ ডেকে ঘটনাকে বড় করেছেন। শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। তাই সংকট নিরসনে এখন তাকেই উদ্যোগী হতে হবে।  শাবিপ্রবির  ইংরেজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আতি উল্লাহ বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের স্থায়ী কোনো সমাধান নয় বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের সাবেক প্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মো. আতি উল্লাহ। শিক্ষাজীবনের কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করে পড়ালেখায় ফিরে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের অভিযুক্ত প্রভোস্ট বডিকে সরিয়ে দিয়ে নতুন প্রভোস্ট বডি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক ড. মো. আতিউল্লাহ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে ২৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর নেওয়ার আগে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের অধীনে কাজ করেছেন প্রায় আড়াই বছর। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য। তার নেতৃত্বে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার নেতৃত্ব দিতে যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সাহস পায়নি সেখানে শাবি সফলতা দেখিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে তিনি সরকারের কাছ থেকে বড় বড় ফান্ড এনেছেন। তার সাড়ে চার বছরের সময়কালে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অকল্পনীয়।’ ড. আতি উল্লাহ মনে করেন, মূল সমস্যাটা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট বডিই তৈরি করেছে। তারা অনেক সত্য গোপন করেছে। উপাচার্যকে ভুল তথ্য দিয়েছে। অর্থকরী পদে থেকে তারা দায়িত্ব পালনে খামখেয়ালিপনা করেছে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পেয়ে আন্দোলনে নেমেছে। ধীরে ধীরে ঘটনা বড় হয়েছে। এর পেছনে বাইরের কোনো মহলেরও ইন্ধন থাকতে পারে। বহিরাগত শক্তি শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝাতে পারে। তা না হলে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যাওয়ার কথা নয়। কারণ শিক্ষার্থীরাও জানে ফরিদ উদ্দিন তাদের প্রতি কতটুকু আন্তরিক। এই উপাচার্যের সময় কোনো সেশনজট তৈরি হয়নি। সময়মতো ক্লাস, পরীক্ষা ও ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। এ নিয়ে তো শিক্ষার্থীরাই উপাচার্যকে নিয়ে গর্ব করত।  সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, চলমান আন্দোলনে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও বিপন্ন। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। এর আশু সমাধান প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মোটেই কাম্য নয়। এটা দুঃখজনক, অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়া, সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো এটা খুবই দুঃখজনক। এতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিজেদের অনিরাপদ ভাবতেই পারে। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ এই পরিস্থিতিতে অদক্ষতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন বলে আমার মনে হয়। তা না হলে এমন পরিস্থিতিতে তিনি আরও কৌশলী ও শিক্ষার্থীবান্ধব ভূমিকা রাখতে পারতেন।

গৌতম চক্রবর্তী বলেন, আট দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তিন দিন ধরে অনশন করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনেকে অসুস্থ অবস্থায় অনশন করছেন। তাদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সন্তানদের এভাবে খোলা আকাশের নিচে রেখে কোনো অভিভাবকই ঘরে শান্তিতে থাকতে পারেন না। এই অবস্থায় একদিকে যেমনি তাদের জীবন রয়েছে শঙ্কা, তেমনি তাদের শিক্ষাজীবনও হুমকির মুখে পড়েছে। তাই এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত করা শোভনীয় হবে না। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত দ্রুত মেনে নেওয়া। তা না হলে মহল বিশেষ এই আন্দোলনের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাইরের কোনো অপশক্তি যাতে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকেও শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান গৌতম চক্রবর্তী।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর