শিরোনাম
শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশানে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে অফিস খুলে কথিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল-তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল বা তাকদীর গ্রুপ। হাজার কোটি টাকার ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) দেখিয়ে পণ্য সরবরাহকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য। গুলশানের ওই অফিসে কাজের চুক্তি করতে আসা ব্যবসায়ীদের নামিদামি রেস্টুরেন্টে শত পদের খাবারে করানো হতো আপ্যায়ন। কাজের চুক্তির নামে সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আল-তাকদীরের কর্ণধার আলমগীর হোসাইন।

সব শেষ সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টে ৩০০ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বলে প্রচারণা চালায় আলমগীরের ওই প্রতিষ্ঠান। বালু দেওয়ার জন্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে ভুয়া চুক্তি করে কমিশন হিসেবে ৩৫-৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ৮ মার্চ রাজধানীর গুলশান থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা হয়। মামলাটি তদন্তে আলমগীরের প্রতারণার বিষয় ওঠে আসে।

বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান ও খিলগাঁও এলাকা থেকে মূল হোতা আলমগীর হোসাইন এবং তার দুই সহযোগী মো. শফিকুল ইসলাম ও মো. ইমরান হোসাইনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের কপি, সাপ্লাইয়ারদের সঙ্গে চুক্তিপত্রের কপি ও একটি ১০ কোটি টাকা কাবিনের ফটোকপি জব্দ করা হয়।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, প্রতারক আলমগীর নিজেকে বড় মাপের ঠিকাদার প্রমাণের জন্য গুলশানে অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে ডেকোরেশন করেন। গুলশানের রেস্টুরেন্টে ১১০ আইটেমের খাবার পরিবেশন করে সাপ্লাইয়ারদের আপ্যায়ন করিয়ে বিশ্বাস অর্জন করেন। বড় সাপ্লাইয়ারদের নিয়ে বিভিন্ন রিসোর্টে কয়েকবার বড় ধরনের পার্টিরও আয়োজন করেন তিনি। সব শেষ ২০২১ সালে সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন বলে প্রচারণা চালান। তার নিজস্ব অনলাইন টিভি (Takdir TV)  চ্যানেলে ব্যাপকভাবে এ প্রচারণা চালানো হয়। এসব প্রচারণা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৩০০ আগ্রহী সাপ্লাইয়ার আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক ঘনফুট বালুতে ১০ টাকা লাভ হবে বলে সাপ্লাইয়ারদের প্রলুব্ধ করেন তিনি। এভাবে ভুয়া চুক্তি করে কমিশন হিসেবে সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক আলমগীরের চক্র। সিআইডির কর্মকর্তা ইমাম হোসেন আরও বলেন, প্রজেক্ট এলাকায় সাপ্লাইয়ারদের নিয়ে ‘প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজের বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টের শুভ উদ্বোধন’ লেখা ব্যানারে যমুনা সেতুর পাশে লালগালিচা বিছিয়ে ধুমধাম করে কাজ উদ্বোধন করা হয়, যার অনেক ছবি ও ভিডিওচিত্র বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে রয়েছে। এ অনুষ্ঠানে নামিদামি অনেক ব্যক্তির হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা যায়। এ ধরনের কার্যকলাপ দেখে বিশেষ করে টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্যান্য এলাকার অনেক সাপ্লাইয়ার কাজ পাওয়ার আশায় প্রতারক আলমগীরের অফিসে এসে চুক্তি করে প্রতারিত হয়েছেন। পরে সবার টাকা আত্মসাৎ করে অফিস ও মোবাইল ফোন বন্ধ করে উধাও হয়ে যান আলমগীর। অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে আলমগীরসহ এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ প্রতারণা কাজ চলার সময়ের মধ্যেই লেনদেনের সূত্র ধরে ইস্টার্ন ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা সালমা সুলতানা সুইটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা নিজে জিম্মাদার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার এলসি, ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দেবেন বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করেন। এমন আশ্বাস পেয়ে আলমগীর তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে ব্যাংকার সালমা সুলতানা সুইটির দাবি মোতাবেক ১০ কোটি টাকা মোহরানা দিয়ে গত বছর জুলাই মাসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর গুলশানের একটি বাসা মাসিক ২ লাখ টাকায় ভাড়া করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এদিকে মানুষজনকে প্রতারিত করে আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী কোটি টাকার গয়নাসহ চার কোটি টাকা তাকে দেন। পরে এলসি না হওয়ায় আলমগীর ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। একপর্যায়ে গত বছর নভেম্বর মাসে আলমগীরকে ডিভোর্স দিয়ে ১০ কোটি টাকার দেনমোহর আদায়ের জন্য দ্বিতীয় স্ত্রী আদালতে মামলা করেন।

আলমগীর এর আগেও নানা কৌশলে বিভিন্নভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামে ট্রাভেল এজেন্সি খুলে সৌদি আরবের জাল ১৫০টি ভিসা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার ও প্রতরণার অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে বলেও জানান সিআইডি কর্মকর্তা ইমাম হোসেন।

সর্বশেষ খবর