মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভার বৈঠক

খাদ্যদ্রব্যের অবৈধ মজুদে হবে জেল জরিমানা

হাওরে নতুন রাস্তা না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে অনিয়ম করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রেখে একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন-২০২২’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সামরিক শাসনামলের জারি করা অধ্যাদেশগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্য ফুড গ্রেইন সাপ্লাই প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি অর্ডিন্যান্স-১৯৭৯’ এবং ‘ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্ট-১৯৫৬’ দুটো আইনকে একসঙ্গে করে নতুন আইন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। বাজারে মান যাতে নিশ্চিত থাকে, কেউ যাতে অনৈতিক কাজ করতে না পারেন, ক্রেতারা যাতে ঠকে না যান। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে কোনো অপরাধ যাতে না হয় সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য এ আইন। খসড়া আইনে কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। কেউ যদি এ আইনের অধীনে অপরাধ করেন তবে তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছর জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। মন্ত্রিসভা বলে দিয়েছে, নিরাপদ খাদ্য আদালতই এগুলো দেখবে, আলাদা কোনো আদালত লাগবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টেও বিচার করতে পারবে, জুরিসডিকশন ওই পর্যন্ত শাস্তি দিতে পারবে। খন্দকার আনোয়ার বলেন, কোনো খাদ্যদ্রব্য যদি জব্দ করা হয়, সে খাদ্য যদি পচনশীল হয়, তবে সে খাদ্যদ্রব্য নিলাম ডেকে বিক্রি করে শুধু স্যাম্পল হিসেবে অল্প একটু রাখা যাবে। খাদ্যপণ্য যদি পচনশীল নাও হয় তবুও ৪৫ দিনের মধ্যে নিলাম করে দিতে হবে, টাকাটা কোর্টের কাছে থাকবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি যদি খালাস পান তবে টাকাটা তিনি পেয়ে যাবেন। আর দণ্ড পেলে আদালত যেভাবে আদেশ দেবে সেভাবে হবে। খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ক্ষতিকর কিছু মিশিয়ে উৎপাদন করা, নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মজুত করা, সরকারি কর্মসূচির নামাঙ্কিত বা বিতরণকৃত এমন চিহ্নযুক্ত ছাড়া সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যশস্যভর্তি বস্তা গ্রহণ, স্থানান্তর, মজুত করা, হাত বদল বা পুনরায় বিক্রি করাও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সরকারি কোনো কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম বিতরণ করা, সরকারি খাদ্যসামগ্রী বিক্রি বা বিতরণের জন্য বিএসটিআই নির্ধারিত বাটখারা বা মাপ ব্যবহার না করে হেরফের করলেও শাস্তি পেতে হবে।

হাওর এলাকায় নতুন করে রাস্তা না করার নির্দেশ : বৃষ্টি বা বন্যার পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে দেশের সব হাওরসহ নিচু অঞ্চলসমূহে সাধারণ সড়কের পরিবর্তে উড়াল সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। হাওর এলাকায় আগাম বন্যা পরিস্থিতি এবং ধানের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হাওর এলাকায় আর নতুন করে রাস্তাঘাট করা যাবে না। যদি করতে হয়, তাহলে এলিভেটেড সড়ক (উড়ালসড়ক) করতে হবে। এ ছাড়া যেসব রাস্তা হয়েছে, সেখানে আধা কিলোমিটার পরপর দেড় শ থেকে ২০০ মিটারের সেতু করে দেওয়া যায় কি না, তাও দেখতে বলা হয়েছে।

বৈঠকের বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজ হাওর পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মৎস্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী কথা বলেছেন।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৮৯ শতাংশ : বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে (২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত) গত প্রায় ৩৯ মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহের ৮৯ দশমিক ০৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার মোট ৮৯টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভার এসব বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসে ৭৪৮টি। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৬৬টি। সে হিসাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। একই সময়ে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে বর্তমানে ৮২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন।

 

সর্বশেষ খবর