বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেট-সুনামগঞ্জে এখনো পানিবন্দি লাখো মানুষ

ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি

শিমুল মাহমুদ, সিলেট থেকে ফিরে

সিলেট ও সুনামগঞ্জে এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি। ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে আছে হাজার হাজার বাড়ি। অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা, বহুতল ভবন, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো ঘরে ফিরতে পারছে না। পানি নামছে ধীরে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মানুষের এখন বেশি দরকার শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানি। তবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শুরু থেকেই ত্রাণ ও পুনর্বাসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখনো হেলিকপ্টারের শব্দ শুনলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসে শত শত মানুষ। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ত্রাণবাহী একটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। হেলিকপ্টার দেখেই পানিবন্দি মানুষগুলো হাত নেড়ে বারবার কাছে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছিল। তা দেখে কয়েকটি জায়গায় হেলিকপ্টারটি কিছুটা নিচে নামিয়ে স্থির করা হয়। এ সময় সুনামগঞ্জের ছাতকে, দিরাইয়ের একাধিক জায়গায় হেলিকপ্টারের নিচে শত শত মানুষ জড়ো হয়। লোকজনের আকুতি দেখে হেলিকপ্টার থেকে নিরাপদ দূরত্বে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট ফেলতে থাকেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি ত্রাণের ব্যাগ পড়তেই সেটি পাওয়ার জন্য সেখানে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। বিমান বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত শুকনো স্থানে হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণের প্যাকেট ফেলেন। গত কয়েক দিন ধরে তাদের এই মানবিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বন্যা উপদ্রুত এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হেলিকপ্টারটির বিমান বাহিনীর সদস্যরা অসহায় পানিবন্দিদের খুঁজে যাচ্ছিলেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ হাত নেড়ে বিমান বাহিনীর ত্রাণ বিতরণকে স্বাগত জানাচ্ছিল। প্রায় চার ঘণ্টা সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে চলার সময় উঁচু ব্রিজ বা সড়কের ওপর অনেক মানুষকে আশ্রয় নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তুলনামূলক পানি কমে যাওয়ায় কিছু কিছু সড়ক ও এলাকা জেগে উঠেছে। রাস্তাঘাটের বেশির ভাগ এখনো নিমজ্জিত। ভেঙে একাকার অনেক সড়ক। রেললাইনের স্লিপারের মাটি সরে গেছে। হেলিকপ্টারে চলার সময় ওইসব বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ত্রাণের নৌকাও চলাচল করতে দেখা গেছে।

ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত : দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে সিলেট ও সুনামগঞ্জের দুর্গম অঞ্চলে প্রায় ৮০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, বিস্কুট, চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, মোমবাতি, দিয়াশলাই ও খাবার পানি। ত্রাণের প্যাকেটগুলো বিশেষ উপায়ে পানিরোধক আবরণে মোড়কজাত এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান থেকে ফেলা হয়। গতকাল সুনামগঞ্জের ছাতক, দিরাই এবং সিলেটের বিভিন্ন স্পটে হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে বিমান বাহিনী। দুর্যোগ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়েও বিমান বাহিনীর এরূপ সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা শুরু থেকেই সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর