বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

এখনো বন্ধ হয়নি হুন্ডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখনো বন্ধ হয়নি হুন্ডি

বিদেশ থেকে এখনো হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আসে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘এটা এখনো বন্ধ হয়নি। আমি পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে একটা গবেষণা/জরিপ করেছিলাম তখন হুন্ডি ও রেমিট্যান্সের অনুপাত ছিল ৪৯ ও ৫১ শতাংশ।’ গতকাল সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী ডলারের বাজার, মূল্যস্ফীতি, খাদ্যপণ্যের বাজার, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়সহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিয়েই কথা বলেন। তবে চলমান এই সংকটকে তিনি ‘সাময়িক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আর মূল্যস্ফীতির সমস্যাটাকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। হুন্ডিতে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় অফিশিয়াল চ্যানেলে বিদেশ থেকে টাকা আসুক সেটা প্রত্যাশা করি। কারণ এর যে সুফল সেটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। হুন্ডির মাধ্যমে যদি টাকা নিয়ে আসে সেটিকে অবৈধ বলব না, সেটি কালো টাকা। যারা সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে আসেন, তারা সব সময় বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আমাদের প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে বলেন। এগুলো তাদের টাকা। পরে তারা যে কোনো কাজে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আনলে প্রশ্ন উঠবে তারা টাকা কোথায় পেলেন।’ হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনো হুন্ডি আছে। আমাদের কাছেও তথ্য আছে এখনো হুন্ডির মাধ্যমে টাকা-পয়সা আসে। হুন্ডি নিরুৎসাহিত করতে আমরা তাদের সুফলের কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রীও সেটি করছেন। রেমিট্যান্স আমাদের অন্যতম একটি খাত। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের পর রেমিট্যান্স অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। আমি মনে করি এটি আমাদের জন্য ভালো লক্ষণ।’ হুন্ডিতে কী পরিমাণ টাকা আসে সেটির কোনো পরিসংখ্যান আছে কি না জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমার এ মুহূর্তে কোনো ধারণা নেই। আমি আগে একটি স্টাডি করে দেখেছিলাম, প্রায় কাছাকাছি অফিশিয়াল চ্যানেলে এসেছে ৫১ শতাংশ আর হুন্ডিতে এসেছে ৪৯ শতাংশ। সে জন্য আমি মনে করি সেই ধারাবাহিকতা এখনো আছে। আমরা যদি অফিশিয়াল চ্যানেলে আনতে পারি, কেন আসবে না। অফিশিয়াল চ্যানেলে আনলে তো লস হচ্ছে না।

প্রবাসীদের শুধু প্রণোদনা নয়, স্বীকৃতিও দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কিন্তু এটি সুন্দরভাবে ভোগ করতে পারবে। এতে প্রশ্ন বা দায়বদ্ধ থাকবে না।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি আবারও গর্বের জায়গায় ফিরবে। আর আমি এটা বিশ্বাস করি, অর্থনীতিকে আমরা মূল স্রোত ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারব। তাতে বেশি সময় লাগবে না। সব জিনিসেই দেখতে পাবেন আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে। আগে যেমন আমাদের অর্থনীতিকে নিয়ে গর্ব করতাম, সারা পৃথিবীর মানুষ যেভাবে গর্ব করত, সেই গর্বের জায়গায় যাব। এটা করতে বেশি সময় লাগবে না।’ মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকটেও দেশে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে বলে আমি মনে করি। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি দেশের অভ্যন্তরে অর্থনীতির ওপর একটি চাপ তৈরি করেছে। ২০০৮-০৯ সালে বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১.৩ শতাংশ। এরপর বহু চড়াই-উতরাই পার করে এসেছে সরকার। সর্বশেষ করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো সংকট অতিক্রম করতে হচ্ছে। এর মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ভালো আছে বলে আমি মনে করি।’

ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই যে ওঠা-নামা বেশি হচ্ছে, সেটি কমিয়ে আনতে হবে। সেটি করতে পারলে একই প্ল্যাটফরম থেকে সবাই এগোতে পারব। সেই প্ল্যাটফরমেই হবে ন্যায়নীতির ভিত্তি। ডলারের বাজারে খুব তাড়াতাড়ি স্থিতিশীলতা ফিরবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে তো আপনারা জানেন। অন্য রকম কোনো আইএমএফ আছে কি না জানি না। একটা আইএমএফ আছে তারা তো এ ধরনের কোনো প্রশ্ন আমাদের কাছে উপস্থাপন করেনি। আপনারাই পত্রিকায় লিখছেন। এটা নিয়ে আমি জবাব দেব না। এটা কেন আপনারা বলছেন আমি জানি না।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দু-এক মাসের মধ্যেই দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। সেই সঙ্গে শিগগিরই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতায় ফিরবে। কমে আসবে ডলারের দাম। বৈশ্বিক সংকটে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় রাখতে এ লক্ষ্যে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ করণীয় সবকিছুই করছে সরকার।’

তিনি বলেন, ‘করোনা আমরা মোকাবিলা করেছি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিও আমরা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হব। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ মূল্যস্ফীতিকে আমরা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। অর্থনীতিকে আগের ধারায় নিয়ে যেতে পারব। আগে যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, দেশ ও অর্থনীতিবিদরা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, বাংলাদেশ দ্রুতই সেই আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। ইউরোপজুড়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিরাজ করছে। জানুয়ারিতে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.১ শতাংশ, এপ্রিলে তা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। জুলাইয়ে এটি ৮.৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বলা যায় ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৭৫ ভাগ বেড়েছে। ওই সব দেশ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে আসার কারণেই দেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেসব দেশে খাদ্যসহ কাঁচামালের দাম বেড়েছে। আর আমরা তো তাদের থেকেই কিনি। এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে।’ মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের এখানকার প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও ভিন্ন। তাই ব্যাংকের সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। যে কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমদানি নিয়ন্ত্রণে শুল্ক বাড়ানো, এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমদানি করে এখন যা নিয়ে আসছি, সেগুলো দেশে পৌঁছালে সঙ্গত কারণে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে। এর বাইরেও বিভিন্ন জিনিসের দাম কমে আসবে। ডলারের দামও কমে আসবে। মূল্যস্ফীতি এখন মাত্র ৭ শতাংশ। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ উদ্যোগটি দেশের মানুষ গ্রহণ করবে। অনুরোধ থাকবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ, আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সবাই যেন আরও উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করেন। যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা আছে, সেটি এই স্কিমের আওতায় আনতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্যই এটি করা উচিত। এখানে আমাদের দুর্নীতি কতটা হয়, সেই তথ্য আমার কাছে নেই। আপনাদের কারও কাছেও হয়তো নেই। কিন্তু অনুমান করে বলতে পারেন যে, দুর্নীতি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি যদি আমদানির চেয়ে বেশি না হয়, তাহলে আমরা রপ্তানি করব কেন- এ প্রশ্নটা এসে যায়। সব সময় আশা করি, রপ্তানি বাণিজ্য আমদানির চেয়ে বেশি হবে। কিন্তু দেখলাম কিছুদিন ধরে এ কাজটি (রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি) হচ্ছে। এখানে একটি আরেকটির ভারসাম্য হিসেবে কাজ করে। সঠিকভাবে এগুলো মূল্যায়িত হচ্ছে না। যে মানুষগুলো শ্রম দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তাদের স্বপ্ন একটাই, আগামী প্রজন্ম লাভবান হবে, তারা একটা বিশুদ্ধ স্বপ্ন দেখবে। সে জন্য তারা যা পাচ্ছেন, দেশে পাঠাচ্ছেন।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর