মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নেইমারে ফিরল ব্রাজিলের ছন্দ

ব্রাজিল ৪ : ১ দক্ষিণ কোরিয়া

নেইমারে ফিরল ব্রাজিলের ছন্দ

নেইমার ফিরলেন। নেইমার খেললেন। ব্রাজিলও ফিরল। ব্রাজিল জিতল। স্বরূপে, সাম্বা ছন্দে। সেই ছন্দে মুগ্ধ ব্রাজিলের সমর্থকরা। মুগ্ধ গোটা বিশ্বের শত কোটি ফুটবলপ্রেমী। ব্রাজিলের হেক্সার স্বপ্ন পরম বাস্তব বলেই প্রমাণ করলেন নেইমাররা! নেইমার যেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’! বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সাম্বা ছন্দ দেখে ব্রাজিলের শীর্ষ ফেবারিট হওয়া মেনে নিয়েছিল সবাই। এমনকি নিন্দুকেরাও। কিন্তু নেইমারকে ছাড়া পরের দুই ম্যাচে ব্রাজিলকে ‘ব্রাজিল’ বলে চেনাই গেল না! নেইমার ফিরতেই ম্যাচের প্রথম মিনিটে ঠিক ব্রাজিলকে চিনে নিলেন দর্শকরা। খেলার ধরনে। আক্রমণের ধারে। কৌশলী পাসিং ফুটবলে। গতির ঝড়ে। এই ব্রাজিলই তো চিরায়ত ব্রাজিল!

গতকাল নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে সাম্বা ছন্দের ঝড় তুলে ব্রাজিল ৪-১ গোলে হারাল দক্ষিণ কোরিয়াকে। টানা অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল সিলেকাওরা। ১৯৯০ সালে শেষবার শেষ ষোলো খেলে বিদায় নিয়েছিল হলুদ জার্সিধারীরা। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার (৯ নভেম্বর)। গতকাল ক্রোটরা ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে জাপানকে হারিয়েছে ৩-১ ব্যবধানে। একই রাতে দুই এশিয়ান দল বিদায় নিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে।

বিশ্বকাপের আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ট্রেনিং নিয়েছিলেন নেইমাররা। মিডিয়ায় সেই ট্রেনিংয়ের খবরটা প্রকাশও হয়েছিল বেশ ঘটা করে। বিশ্বকাপের ম্যাচে গোল করার পর কীভাবে উদযাপন করবে ব্রাজিল! নেচে নেচে। সেই নাচও আবার এক রকমের হলে হবে না। একেক গোলের পর একেক নাচ। গতকাল ভিনিসাসের গোলের (৭ মিনিট) পর ব্রাজিলের ফুটবলাররা একে অপরের সঙ্গে মিলে এক অ™ভুত নাচ নাচলেন। নেইমারের পেনাল্টি গোলের (১৩ মিনিট) পরও ছিল নাচ। ২৯ মিনিটে গোলের পর রিচার্লিসন সতীর্থদের সঙ্গে উৎসব সেরে ছুটে যান কোচ তিতের কাছে। প্রফেসর খ্যাতি পাওয়া কোচকেও নাচতে বাধ্য করেন তিনি। শিষ্যের অনুরোধ রাখতে হাসতে হাসতেই নাচে অংশ নেন তিতে। লুকাস পাকেতার গোলের (৩৬ মিনিট) পরও ছিল নাচের প্রদর্শনী। এসব নাচের কী যে নাম, তা কেবল নাচ বিশারদরাই বলতে পারেন। তবে সাম্বা ছন্দের ফুটবলের পর এসব নাচও ছিল দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। ব্রাজিল প্রথমার্ধেই চার গোল দিয়ে ম্যাচের পরিণতি জানিয়ে রাখে দর্শকদের। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথমার্ধে চার গোল করেছিল জার্মানি। এরপর ব্রাজিলই প্রথম বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের ম্যাচে প্রথমার্ধে চার গোল করা প্রথম দল। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে পাইক সিয়াঙ হো (৭৬ মিনিট) একটা গোল করে ব্যবধান কমান। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েও আর গোলের দেখা পায়নি।

মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি গতকাল গ্যালারিতেও লড়াই হয়েছে। সেই লড়াইয়েও জয় ছিল ব্রাজিলেরই। গ্যালারির চার দিক থেকে ভেসে আসে ‘ব্রাজিল, ওলে ওলে ওলে’ কোরাস। কিছু কিছু স্থান থেকে শোনা যায় ‘হে হা মিন গো’ (অর্থ, কোরিয়া) চিৎকার। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের ‘ওলে ওলে ওলে’ কোরাসের গর্জনে হারিয়ে যায় অন্য সব আওয়াজ। হলুদ সমুদ্রের ঝড় থামলে মাঝে মধ্যে বোঝা যায় কোরিয়ানরাও গ্যালারিতে আছে। নাহলে তাদের অস্তিত্ব নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল ‘মাইক্রোস্কোপিক মাইনরিটি’র (অতি ক্ষুদ সংখ্যা) মতোই! ব্রাজিলের দর্শকরা ম্যাচে কয়েকবার পেলের সুস্থতা কামনা করলেন। ব্রাজিলের বিশাল পতাকা মেলে ধরেন তারা। সেই পতাকায় পেলের ছবির নিচে লেখা ছিল, গেট ওয়েল সুন (দ্রুত সুস্থ হও)। পেলের সুস্থ হওয়াটা খুবই জরুরি বৈকি। বিশ্বকাপে হেক্সা জয়ের জন্য নেইমারদের তাতিয়ে দিয়েছিলেন তো পেলেই!

আরব্য রজনীর একটা দারুণ গল্পের মঞ্চায়ন দেখা গেল গতকাল। তবে আরব্য রজনীর গল্প তো এখনো শেষ হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত ও শেষ গল্পটার জন্য। বিশ্বকাপের আরব্য রজনী শেষ না হলেও গতকাল শেষটা দেখে নিল নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামের দর্শকরা। এই স্টেডিয়ামটা তৈরি করা হয়েছিল বিশ্বকাপের জন্য। গতকাল এই স্টেডিয়ামে শেষ হলো বিশ্বকাপ। কাতার বিশ্বকাপের আর কোনো ম্যাচ নেই নাইন সেভেন ফোরে। এই স্টেডিয়াম স্থানান্তরিত হবে উরুগুয়েতে। সামনের কোনো বিশ্বকাপের আয়োজক উরুগুয়ে হলে, নাইন সেভেন ফোর হয়তো বিশ্বকাপের মাঠ হবে আবারও। নতুন কোনো নামে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর