সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গণমানুষের আস্থাই বড় শক্তি : শেখ হাসিনা

বিএনপি-জাপা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, জনগণের নয়। আমার বয়স হয়েছে, এটা মনে রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে গণভবনে সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা দলীয় সভানেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের আর কোনো শক্তি নেই। আমরা কেবলমাত্র জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাস করি। টানা দশমবার দলীয় সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রথমে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় শনিবার ঘোষিত ৪৮ নেতা ও সাবেক কমিটির নেতারা, দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা, সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলররা গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।  এর আগে সকাল ১০টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সঠিকভাবে যদি জনগণকে পথ দেখাতে পারে, তাহলে দেশের উন্নয়নে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা দলকে শক্তিশালী করতে অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন। আপনাদের প্রতি এ আমার অনুরোধ। নেতা-কর্মীদের কাছে দোয়া চেয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নির্বাচিত করেছেন আবার। এতবার মনে হয় একটা পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না। তারপরও এখন যেহেতু বিশ্বব্যাপী একটা দুঃসময়, সে জন্যই আমি হয়তো মানা করিনি। কিন্তু আমার বয়স হয়েছে, এটা মনে রাখতে হবে। সংগঠনটা যেন ঠিক থাকে, সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে।

গণভবনে নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানিয়ে দলীয় সভানেত্রী বলেন, যাই হোক! আপনারা এসেছেন কষ্ট করে। এই ভবন আপনাদেরই ভবন। এটার নাম আব্বা দিয়েছেন গণভবন। কারণ এটা জনগণেরই ভবন। তিনি প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় দলীয় কার্যালয় স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় একটি কার্যালয় থাকা দলের জন্য প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইউনিটকে তাদের অফিস স্থাপনে সাহায্য করবে, যদি তারা অক্ষম হয়। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। অনলাইনের মাধ্যমে পুরো দেশের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কেন পিছিয়ে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা এ দেশের মাটি ও জনগণ থেকে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সামরিক শাসকদের পকেট থেকে এসেছে। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছে। এরা ভাসমান, কাজেই এদের দায়-দায়িত্বটা জনগণের ওপর নেই। ক্ষমতায় থেকে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় দেশ, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীরা কখনো এটা পছন্দ করবে না। কিন্তু আমাদের জনগণকে যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি এটা কেউ আটকাতে পারবে না। যেটা জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন কেউ দাবায় রাখতে পারবা না, সেটা পারবে না। কাজেই এটা আপনারা সবাই সব সময় মাথায় রেখেই সংগঠনটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন; সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন, এটাই আমার অনুরোধ।

দলে নতুন সদস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু বই ছাপিয়ে দিয়েছি সদস্য সংগ্রহ করার জন্য। এই কাজটা আমাদের প্রত্যেকটা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে সম্পন্ন করতে হবে এবং মুড়ি বইগুলো ফেরত দিতে হবে। আমরা আবার নতুনভাবে টিম করে দেব একটা বিভাগে; বিভাগীয় যে টিম আমরা করে দেব তাদের ওপর দায়িত্ব থাকবে প্রত্যেকটা জায়গায় সদস্য সংগ্রহ হলো কি না।

বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনগুলো যথাসময়ে করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনটা আপনারা যথাযথ সময় করবেন। আমরা নতুনভাবে টিম করে দেব একটা বিভাগের জন্য। অনেকগুলো এখনো বাদ রয়ে গেছে; একটাও যেন বাদ না থাকে। তিনি করোনা মহামারি, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের প্রতি ইঞ্চি আবাদি জমি ব্যবহারের ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কারণে অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বকে গ্রাস করছে। অনেক ধনী দেশ এরই মধ্যে নিজেদের মন্দাক্রান্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই সে ফাঁদে পড়া যাবে না। বরং আমরা যদি অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করতে পারি তাহলে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়েও বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানি করতে পারি। অনেক দেশ এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে খাদ্য আমদানির ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

সর্বশেষ খবর