বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মার্চের মাঝামাঝি আসছে আদানির বিদ্যুৎ

জিন্নাতুন নূর, ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে

মার্চের মাঝামাঝি ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎ। গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ থেকে কেন্দ্রটি পরিদর্শনে যাওয়া সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মার্চের মাঝামাঝি আমরা প্রথম ইউনিটের ৫০% নিতে পারব। এ প্রকল্প পরিদর্শনে এসে আমরা দেখতে পেরেছি মোটামুটি তাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রথম ইউনিট থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া যাবে। এখন ২৫০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ৭৫০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ নিতে পারব। এর জন্য যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়েছে তা সরাসরি বাংলাদেশে যাচ্ছে। ভারতের গ্রিড থেকে আমরা এ বিদ্যুৎ নিচ্ছি না। এটি বাংলাদেশের গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এ জন্য ডেডিকেটেড একটি লাইন থাকবে। পরবর্তীতে এ লাইনের মধ্য দিয়ে আমরা সোলার পাওয়ার নিতে পারি কি না সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। ১৪৯৬ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ থেকে বাংলাদেশ অংশে আমরা ১৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। এটি একটি কয়লাভিত্তিক আলট্র্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। এর অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারতের অংশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। মার্চে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে এই প্রকল্প সহযোগী ভূমিকা রাখবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ায় এতে আমাদের ব্যয় কম হবে। ক্রাইসিস পিরিয়ডে এই প্রকল্প বড় ধরনের সহযোগিতা করবে। চলতি বছরের শেষের দিকে তেলভিত্তিক ১ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিদ্যুৎ দিয়ে তখন ঘাটতি মেটানো যাবে। ২০২৩ সালের জুনে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও উৎপন্ন প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের মূল্য সঞ্চালন লাইনসহ ১৭ সেন্টের মতো পড়বে। আর এ মূল্য পুরটা কয়লার দামের ওপর নির্ভর করবে। আমরা ট্যারিফ ঠিক করেছি পুরো একটি প্যাকেজের মধ্য দিয়ে। কারণ আমাদের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হয়েছে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার। এ ব্যয় বিদ্যুতের মূল্যের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কয়লার দাম বিশ্বে কমে আসলে বিদ্যুতের মূল্যও কমে আসবে। সাধারণত এ ধরনের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে ১ হাজার একর পরিমাণ জমি প্রয়োজন হয়। কয়লার জন্য টার্মিনাল নির্মাণ করতে হয়। এ ধরনের প্রকল্পে ২ বিলিয়ন পরিমাণ অর্থের জোগান লাগে। সময় লাগে ৫-৬ বছর। তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ আমদানিতে আমাদের টেকনিক্যাল টিম যাচাই করছে। আজ দিল্লিতে ভারতের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক আছে। সেখানে কীভাবে দুই দেশের মধ্যে সংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, নেপাল থেকে ডেডিকেটেড লাইন নির্মাণ, ভুটান ও আসাম থেকে বিদ্যুৎ আমদানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। আদানি পাওয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনিল সারদানা বলেন, এ প্রকল্পে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এখানে ১২ হাজারের মতো মানুষ কাজ করবে। বর্তমানে এর প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক কমিশনিং শুরু হয়েছে। ইউনিট দ্বিতীয়র কাজও শেষ পর্যায়ে। মার্চে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ দিতে পারব। তবে বিদ্যুৎ না দিয়ে আদানি বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেবেন না। এটি এখন পর্যন্ত ভারতের প্রথম আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। এ প্রকল্পের জন্য বাইরের যে দেশ থেকে তুলনামূল ভালো দামে কয়লা পাব সে দেশ থেকে কয়লা আমদানি করব। ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে অন্যদের মাঝে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য,  গত ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদানি পাওয়ার লিমিটেড, ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ার লিমিটেড, ইন্ডিয়া কর্তৃক ভারতের ঝাড়খন্ডে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাবস্টেশন ও অন্যান্য সঞ্চালন কাজ পিজিসিবি নির্মাণ করেছে।

সর্বশেষ খবর