সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যালটে সংসদ ভোটের প্রস্তুতি

এনআইডি ইসিতে রাখার পক্ষে-বিপক্ষে মত

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ইলেকট্র্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নতুন প্রকল্প পাস না হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব হবে না। তাই নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপারে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসির হাতে যেসব ইভিএম রয়েছে তা ব্যবহার করা হবে।  

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে রাখার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এনআইডি ইসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা অন্য যেখানেই থাকুক না কেন ইভিএম ব্যবহারে কোনো ঝামেলা হবে না বলে মত দিয়েছেন তারা। কেউ কেউ বলেছেন, ইসি এনআইডির কাজ দক্ষতার সঙ্গে করে আসছে, তাই কমিশনের কাছে রাখাই ভালো। অন্য কেউ কাজ করলে সময় লাগবে, এতে মানুষ যে সার্ভিস পাচ্ছে, তা বিঘিœত হবে। তাই ইসির কাছে এনআইডি রাখার জন্য সরকারকে কনভিন্স করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মতামত দেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ আলোচনা হয়।

এনআইডি ইসির কাছে রাখার পক্ষে-বিপক্ষে মত : নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ ইসির অধীনেই এনআইডি থাকার পক্ষে। কেউ কেউ থাকার পক্ষে নন। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা-না থাকা নিয়ে কোনো সংকট নেই। তবে এটা নিয়ে যেন টানাহেঁচড়া না হয়, যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি তাই আমরা প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়েছি। পরবর্তীতে কমিশন বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নতুন প্রকল্প পাস না হলে ১৫০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা একটা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন এবং যুক্তি তুলে ধরছিলেন যে ইভিএমে ভোট হলে এবং মন্ত্রণালয়ে এনআইডি চলে গেলে ভোট নিতে সমস্যা হতে পারে। যেহেতু বিষয়টা টেকনিক্যাল, তাই আইটি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো শুনেছি। আমরা কোনো মতামত দিইনি। তিনি বলেন, উনারা স্পষ্টভাবে চারজন যেটা বলেছেন, টেকনিক্যালি কোনো সমস্যা হবে না। কারণ সার্ভার তো আমাদের কাছেই থাকছে। এটা কোনো সমস্যা নয়। মিশ্র বক্তব্য এসেছে। একজন বলেছেন, এটা তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কেউ বলেছেন, যেহেতু এটা সরকারেরই কাজ, তাই সরকার চাইলে নিতে পারে। তবে ইসি যেহেতু এটা দক্ষতার সঙ্গে করে আসছে, তাই কমিশনের কাছেই যদি রাখা যায় সেটা ভালো। এখন অন্য কেউ এই কাজ (এনআইডি) করলে, সময় লাগবে, এতে মানুষ যে সার্ভিস পাচ্ছে, তা বিঘিœত হতে পারে। তাই সরকারকে যদি কনভিন্স করা যায় এটা এখানে থাকলে ভালো হয়। উনারা আরও বলেছেন, ইভিএমে যেখানে ভোট হবে, সেখানে শুধু এনআইডি ইনসার্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে নামটা চেঞ্জ করে ভোটার কার্ড করে দেবেন। যেহেতু অনেক মানুষ সার্ভিস নেওয়ার জন্য এনআইডি নেয়, এতে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যাবে না।

ইসির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত : গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত ইসির মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক হায়দার আলী, অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারও ছিলেন।

বৈঠক শেষে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাই সেটা স্বীকার করে নিচ্ছি অত্যন্ত সন্দর একটা ডাটাবেস আছে। ১৮ বছরের নিচে যারা আছে তাদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এখন কমিশন নাকি অন্য কেউ নেবে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, সিদ্ধান্ত কমিশন বা সরকার নেবে। তারা আরও জানবেন বিষয়টা। কোনো কোনো দেশে কমিশনের কাছে আছে। কোনো কোনো দেশে সরকারের কাছে আছে। আমরা কোনোটাই জোর দিইনি কার কাছে থাকা উচিত। বুয়েটের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, দেশের বড় সম্পদ। সুষ্ঠুভাবে মেইনটেইন হোক এবং যেখান থেকেই হোক আমরা সেটাই চাই। অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রে আমরা ব্যয় সাশ্রয় করি এবং কমিশনের এই বিষয় অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক সময় একটি কাজ যখন সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকে তখন সেটা আমরা অন্য জায়গায় নিয়ে যাই। নানা ধরনের সমস্যায় ভুগি। কো-অর্ডিনেশনে আমরা মোটেই ভালো নয়। যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজটা হয় এটাই আমরা চাই। ইসির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই যাক না কেন তাদের তো এই অভিজ্ঞতা নেই। কাজেই এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।’

সর্বশেষ খবর