সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
জেপির সম্মেলনে বক্তারা

সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন ঐক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে- বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। অভিমান ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিজয়কে সুসংহত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হবে।’ গতকাল দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির (জেপি) ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পাটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খানসহ ১৪ দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।  প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, মান-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ হোন। রাজনীতিকে ভালো ও মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। খারাপ লোকদের হাতে রাজনীতি থাকলে দেশ খারাপ থাকবে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশ উল্টো পথে চলেছে, বিপ্লবের বদলে প্রতিবিপ্লব হয়েছে। বার বার রাজনৈতিক সম্পর্কে দেয়াল তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এদেশকে এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। জয়কে সুসংহত করতে ও উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র  আমির হোসেন আমু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে বিলুপ্ত করে বিএনপি আবার দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। সংবিধান সংশোধনের নামে আবার তারা এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। আজকে স্বাধীনতার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক চেতনায় এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বড় প্রয়োজন। এই ঐক্যবদ্ধ শক্তির মাধ্যমে বিগত দিনে তারা যেভাবে বার বার পরাজিত হয়েছে, আগামী দিনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাই ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধ অব্যাহত, সুসংহত থাকবে। চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমরা যাদের প্রতিহত করতে চাচ্ছি, তাদের সন্তানরা বড় বড় দলের অনেক জায়গায় বসে আছেন। আর আমরা এখানে বসে তাদের প্রতিরোধ করার কথা বলছি। এক দিকে আদর্শের কথা বলব, চেতনার কথা বলব, স্বাধীনতা যে কারণে অর্জন করেছিলাম সেই কথা বলব, সবই সত্য। কিন্তু আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, অন্যদের প্রতিরোধ করতে চাচ্ছি, কিন্তু ঘরের ভিতরে যারা আছেন, তাদেরও প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র ছিল, থাকবে। তবুও মানুষের কল্যাণের কথা বলতে হবে। অন্য দলের ষড়যন্ত্রকারীদের পাশাপাশি নিজ দলের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানকে আবারও বিএনপি ক্ষতবিক্ষত করতে চায়। তাদের এই অপচেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে।  জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি অপরাজনীতি করা দল, তারা রাজনৈতিক বেয়াদব, তারা রাষ্ট্রকে কি মেরামত করবে? আগে তাদের মেরামত করতে হবে। 

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল বলে আখ্যায়িত করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তিনি বলেন, অনেকে মনে করে বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। আমি কোনো দিন বিএনপির সঙ্গে যাইনি। ড. কামাল হোসেনকে দেখে, তার নেতৃত্বাধীন জোটে গিয়েছিলাম। আমার যখন মনে হয়েছে ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত কিন্তু নেতা নন, তার নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থা নেই। সবার শেষে জোটে গিয়েছি, সবার আগে বের হয়ে এসেছি। আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ ভুল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়া। তিনি আরও বলেন, আমার কোনো বড় বোন ছিল না। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যখন দেখা করি, তিনি আমাকে ভাই বলে ডেকেছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, তোমাকে ভাই বলে ডেকেছি, আজীবন ভাইয়ের মর্যাদা রক্ষা করব। আমি কিন্তু এত কাঁচা না। আমাকে যে ভাই বলে ডেকে মর্যাদা রক্ষা করতে পারে, আমিও ভাইয়ের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি। তার জন্য জীবন দিতে পারি।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ততদিন চলতে হবে। সেখানে নতুন করে মেরামত করার কিছু নেই। তিনি বলেন, আমি সব সময় ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার মৃত্যু পর্যন্ত ষড়যন্ত্র আমাকে ছাড়বে না। আমি জীবনে কোনো দিন ষড়যন্ত্র করব না।

সর্বশেষ খবর