সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যবসায় বড় বাধা দুর্নীতি

সিপিডির জরিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনো বড় বাধা দুর্নীতি। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঋণ ও অদক্ষ প্রশাসন নিয়েও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরা। এসব খাতে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে কমিশন, ভোক্তা অধিকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। দেশের উদ্যোক্তাদের নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২২ শীর্ষক এক জরিপে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ফলাফল প্রকাশ করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

এ ছাড়া বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে ‘গ্রিন সিটি’ নির্মাণে আলাদা ঋণ আসা উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবেশ দূষণ কমবে। আইটি সেবার পরিধি বাড়লেও ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ব্যবসায় মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রা সংকট ও অস্থিতিশীল নীতির মতো নতুন চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন ও সুদহার সীমা উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। গত বছর জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে করা জরিপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন কর্মকর্তা জরিপে মতামত প্রদান করেন। জরিপে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী দুর্নীতিকে ব্যবসার বড় বাধা মনে করেন। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতি হয় বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন ব্যবসার দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ ব্যাংক ঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ নীতি ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ দুর্বল নীতি-নৈতিকতা ও সরকারে স্থিতিশীলতার অভাব, ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রমসংক্রান্ত নিয়ম-নীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, ২০২১-এর তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশ দুর্বল ছিল। কর কাঠামোতেও ভারসাম্য আনা যায়নি। সড়ক, রেল ও নৌপথে অনেক অবকাঠামো মানসম্মত নয়। জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই বাড়তি মূল্যের ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরের দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তিনি বলেন, এসব কারণে বাংলাদেশের মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ওই সব মূল্যস্ফীতির কারণে হাবুডুবু খাচ্ছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ও ব্যবসায়ীরা এক ধরনের চাপে রয়েছেন। এই সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এর ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যার চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাবে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানের যে চেষ্টা রয়েছে, তা না কমে আরও বাড়বে। পাশাপাশি রপ্তানিকারক শিল্পগুলো উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর