রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
শেয়ারবাজার নিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

বিনিয়োগে একাধিক প্ল্যাটফরম থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনিয়োগে একাধিক প্ল্যাটফরম থাকবে

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমরা নতুন নতুন প্রডাক্ট নিয়ে শেয়ারবাজারে আসছি। বিনিয়োগকারীরা বিকল্প অর্থায়ন, বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ দেখে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সামনে বিনিয়োগের একাধিক প্ল্যাটফরম থাকলে তারা পছন্দ করতে পারে। বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দ থাকলে বিনিয়োগ সহজ হয়। বাংলাদেশে এখন সেটি হচ্ছে। এখন পরিবর্তনের সময়। সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তনের মধ্যবর্তী সময় পার হয়ে গেলে সামনে মানুষ বড় কিছু দেখতে পাবে। এখন যারা বিনিয়োগ করবেন তারা লাভবান হবেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. শিবলী রুবাইয়াত বলেন, শেয়ারবাজারে আস্থার কথা নিয়ে আলোচনা হয়। বাজারে কিছু সমস্যা ছিল। আমরা সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে সমন্বয় করে সব ঠিক করে ফেলেছি। এখনো সামান্য যেসব সমস্যা আছে সেগুলো আগামীতে সমাধান হয়ে যাবে। বাজারে বড় ধরনের কাজ করার কিছু নেই। এখন আমাদের বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বড় বড় বিনিয়োগকারীদের আরও বৃহৎ আকারে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশের শেয়ারবাজার তুলনামূলক অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছে। এখানে একটি সমস্যা বিশ্বে যুদ্ধবিগ্রহ থাকলে সঞ্চয় কম করে মানুষ নিজেকে সুরক্ষিত করতে চায়। বিনিয়োগ কম করে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। এখন মানুষ বুঝতে পেরেছে, আমাদের দেশের অর্থনীতি, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যে অস্থিরতা বা অনিশ্চয়তা ছিল সেখান থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। এখন আমরা অনেক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। মানুষ এখন বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। শেয়ারবাজারে জ্ঞান-বুদ্ধি বিবেচনা করে, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়া যাবে। যারা বুদ্ধিমান তারা শেয়ারবাজারে আসছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজনের কাছ থেকে টাকা অন্যজনের কাছে যায়। তাই একজন মুনাফা পায়। আরেকজনের লোকসান হতে পারে। কারও যদি লোকসান হয়ে থাকে তাহলে অন্য কারও লাভ হয়েছে। তিনি বলেন, বাজার সম্পর্কে যারা নেতিবাচক প্রচারণা করে তারা নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বলে। কোনো ব্যক্তি বাজার সম্পর্কে যে কথা বলুক তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য থেকেই বলে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সাবধান হতে হবে। কেন কথাগুলো বলছে বা তার দেওয়া তথ্যগুলোর সত্যতা কী? সেসব বিষয় সম্পর্কে সবার সচেতন থাকতে হবে। অনেকে নিজের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নানা ধরনের কথা বলে থাকে। বিভিন্ন বিষয় সামনে এনে প্রচার করে। নিজের শেয়ার বিক্রি বা কেনার উদ্দেশ্য সামনে রেখে অনেক বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। আমাদের মুখপাত্র আছেন, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম রয়েছে। এসব মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে খবর এলে সেগুলোকে গ্রহণ করা উচিত নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা-ই আসুক সেটাকে বিশ্বাস করা যাবে না। গোপন তথ্য এবং গুজব এসবের ওপর বিশ্বাস করে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে অন্যকে দোষারোপ করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, গুজবের ওপর বিশ্বাস করলে ক্ষতি হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশের ব্র্যান্ডিং করেছি। তাদের এ দেশে নিয়ে আসার বিষয়ে কাজ করছি। দেশি যারা বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী আছেন সবাইকে উৎসাহ দিয়ে অনুপ্রাণিত করছি, যাতে তারা এখানে বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগকারীরা আসছে, আরও আসবে। আমরা আমাদের কাজ করছি। ফল পেতে হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে। বিনিয়োগ হচ্ছে তার একটি প্রমাণ হলো আমাদের বাজার মূলধন ছিল সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা। এখন এটা ৮ লাখ কোটি টাকার ওপর হয়েছে মাত্র আড়াই বছরে। আড়াই বছরে আমরা এটাকে প্রায় তিন গুণ করে ফেরতে পেরেছি। তার মানে নিশ্চয়ই বিনিয়োগ আসছে। এখানে সরকারি সিকিউরিটিজের একটি বড় ভূমিকা আছে। তা ছাড়া আমাদের প্রাইভেট এবং ব্যক্তি বিনিয়োগ আছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জিডিপি সাইজ সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আগামীতে আমাদের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের জীবনমান বাড়বে। বাংলাদেশে বিভিন্নরকম পণ্যের বাজার ছড়িয়েছে। নিত্যনতুন পণ্য বাজারে আসছে। ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব পণ্যের জন্য নতুন আইন-নিয়মের প্রয়োজন হবে। সে কারণে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফরম, যা আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। বাংলাদেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শুরু হলে অর্থনীতিতে বড় একটি পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাজারে কোথায় সঠিক প্রাইসিং আছে আমরা জানতে পারব। বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানি সহজ হবে। বাংলাদেশের বাজারে যারা ইমপোর্টার, উৎপাদক রয়েছে তারা বিশ্ববাজারে কোথায় কম দামে পণ্য পাওয়া যায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করে সেটা জানতে পারবে। এতে উৎপাদিত পণ্যের খরচ অনেক কমে যাবে। কোনো মিডলম্যান থাকবে না। শিবলী রুবায়েত বলেন, গোল্ডবাজার বাংলাদেশকে আরেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দেশে এখন গোল্ড রিফাইনারি হচ্ছে। গোল্ড ফেয়ার হচ্ছে। অতীতে যা ছিল না এখন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সেটা করছে। আমাদের দক্ষ কারিগর রয়েছে। তারা উন্নতমানের জুয়েলারি পণ্য তৈরি করছে। সেগুলো বিশ্ববাজারে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। আর বিশ্ববাজারে আমাদের জুয়েলারি পণ্য যাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। তিনি বলেন, গোল্ড শুধু একটি পণ্য নয়, এটা দিয়ে আমরা রিজার্ভ মেইনটেন করি, এর বিপরীতে মুদ্রা সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশে গোল্ড রিফাইনারির মতো একটি প্রতিষ্ঠান দরকার ছিল। এমন গোল্ড এবং ডায়মন্ড শিল্প বেশ কয়েকটি দেশে আছে। সেসব দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য অনেক ভূমিকা রাখে।

সর্বশেষ খবর