সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেই আগুন নাশকতা

নেপথ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লড়াই ৭৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেই আগুন নাশকতা

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫ মার্চের অগ্নিকান্ডের ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল বিকালে তদন্ত কমিটির প্রধান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি মামলা দায়েরসহ ১০টি সুপারিশও করা হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান মো. আবু সুফিয়ান।

তিনি জানান, চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। তিন দিনের তদন্তকালে কমিটি অনন্ত ৭৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। রোহিঙ্গারা বলছেন, এটি পরিকল্পিত নাশকতা। এসব রোহিঙ্গা যে সাক্ষ্য দিয়েছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ও নাম পাওয়া গেছে। এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার করার মাধ্যমে এ ঘটনার অধিকতর তদন্ত জরুরি।

তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আবু সুফিয়ান বলেন, দুপুর আড়াইটায় ১১ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আরও কয়েক স্থানে আগুন লাগে। এটা নাশকতার প্রমাণ করে। অগ্নিকান্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আগুন রোহিঙ্গারা নেভাতে গেলে অনেকেই নিষেধ করেছেন। তবে তা রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, আগুন নেভানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরি।

তদন্ত কমিটি জানায়, ওই দিনের আগুনে ২ হাজার ২০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। আর আহত হয়েছে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা।

প্রতিবেদনে করা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারার মতো প্রশস্ত করা যেতে পারে। রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে আগুন সহিঞ্চু কিছু ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র বাজার বসাতে না দেওয়া এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্য স্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশমুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃম্ফূর্ত অংশ গ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের প্রতিটি ওয়ারলেস টাওয়ার ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন। এক ক্যাম্প থেকে অপরাধ করে অন্য ক্যাম্পে যাতে পালাতে না পারে সে জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা।

সর্বশেষ খবর