বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফায়ার সার্ভিসের ওপর হামলা ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন বাজি রেখে যারা আগুন নেভানোর জন্য সবার আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন, সেই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরাই হামলার শিকার হলেন। গতকাল বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন নেভানোর সময় তাদের ওপর হামলা চালায় ব্যবসায়ী নামধারী একদল দুর্বৃত্ত। হামলা চালানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরেও। ইটপাটকেল ছোড়াসহ ভিতরে প্রবেশ করে গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এসব ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। বঙ্গবাজারের ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ঘেরাও করে রাখে দুর্বৃত্তরা। এতে আহতদের হাসপাতালে নিতে বেগ পেতে হয়েছে। তাদের চিকিৎসাসেবার ব্যাঘাত ঘটেছে। এসব বড় দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতা না করে উল্টো তাদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণকে ন্যক্কারজনক বলে আখ্যায়িত করছেন ফায়ার বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা তো নিজের জীবন দিয়ে আপনাদের রক্ষা করেন। তাদেরই কেন আঘাত করা হলো? কারা আঘাত করল! এ উচ্ছৃঙ্খল লোকজন কারা? কেন তারা এমন আচরণ করল! আমাদের যেসব গাড়ি জাতীয় সম্পদ ও মূল্যবান জীবন রক্ষা করে, সেই সব গাড়ি কী উদ্দেশ্যে ভাঙচুর করা হলো? আপনাদের পাশে সবার আগে আমরা। এর পরও আমাদের ওপর কেন আক্রমণ? কেন আঘাত ফায়ার সার্ভিসের ওপর? ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অফিসার এবং সব পদবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানুষের জন্য জীবন দেন। গত এক বছরে ১৩ জন ফায়ার কর্মীর প্রাণ গেছে। নিহত ১৩ ফায়ার ফাইটার অগ্নিবীর খেতাব পেয়েছেন। এ ছাড়া ২৯ জন আহত হয়েছেন। আজকে (গতকাল) আমাদের আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেন বা কারা ফায়ার সার্ভিসের ওপর আঘাত হানল আমার বোধগম্য নয়।’ গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ী নামধারী একদল দুর্বৃত্ত ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলা চালায়। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবাজার মার্কেটের ভয়াবহ আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের ৬৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটজন আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোক ফায়ার সার্ভিসের ১১টি গাড়ি এবং সদর দফতরের ভিতরে প্রবেশ করে ইআরসিসি ভবন ও রিসিপশন ভবন ভাঙচুর করে এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মারধর করে। বাইরে থেকেও উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সদর দফতরের ভিতরে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আগুন নেভানোর সময়ও তাদের অনেক কর্মী মারধরের শিকার হন। পরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঢামেক হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যসহ ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হচ্ছেন- ফায়ার সার্ভিস কর্মী মেহেদী হাসান, রবিউল ইসলাম অন্তর, আতিকুর রহমান রাজন, দিদারুল ও ডেপুটি ডাইরেক্টর বাবুল চক্রবর্তী। অন্যরা হচ্ছেন- নিলয়, শাহিন, রিপন, রুবেল, দুলাল মিয়া, মো. সুমন মিজি ও বঙ্গবাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মো. সোহেল। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, আটজন ঢামেক হাসপাতালে ও একজন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর