শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচন ও আন্দোলন দুই প্রস্তুতিতে বিএনপি

♦ প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই ♦ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর নতুন কর্মসূচি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নির্বাচন ও আন্দোলন দুই প্রস্তুতিতে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন এবং আন্দোলন দুই প্রস্তুতিই আছে বিএনপিতে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বা নতুন বছরের প্রথম দিকে ভোট হলে যাতে দলটি অংশ নিতে পারে সেজন্য চলছে নানা প্রস্তুতি।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে চলছে সেই প্রস্তুতি। দল গোছানোর পাশাপাশি ৩০০ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে গোপনে চলছে কাজ। দলের হাইকমান্ড নানা মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করছেন। এর আগে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন অক্টোবর নাগাদ ‘সর্বাত্মক’ সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দিতে চায় বিএনপি। এ ছাড়া আসন্ন পাঁচ সিটি ভোটে মাঠে থাকবে তারা কৌশলে।

নির্বাচনী প্রস্তুতি : দাবি আদায়ের পর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য চলছে নানা প্রস্তুতি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আর এ কর্মসূচি মূলত তত্ত্বাবধান করতে দেওয়া হয়েছে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন এমন সম্ভাব্য প্রার্থীদের।

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদেরও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এ কর্মসূচি তদারক করতে। যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী তাদের ভোটের মাঠ গোছাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কি না তা মনিটরিং করা হচ্ছে। আন্দোলনে রাজপথে না থাকলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। হাইকমান্ডের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। প্রমাণ হিসেবে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তাদের এখন একমাত্র চিন্তা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়। দলীয় নেতারা জানান, বিএনপি যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে গিয়ে জয়ী হওয়ার মতো সক্ষম রাজনৈতিক দল। তবে তাদের কাজ একটাই- ভোটের অধিকার আদায়। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ঘোষণা আসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের।

আন্দোলন বেগবান করতে চায় : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে যাচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো। রোজার ঈদের পর দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এক দফা দাবি ঘোষণার পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন। তারা বলছেন, রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

বিএনপি তাদের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন অক্টোবর নাগাদ ‘সর্বাত্মক’ সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনসহ ১০ দফা দাবিতে মিত্র জোট ও দলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘যুগপৎ আন্দোলন’। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি দিতে রূপরেখা তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চান দলের হাইকমান্ড। তারা দুই ঈদ ও বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে জুন-জুলাই থেকে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে।

বিএনপির নেতৃত্বে পরিচালিত এ আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে জেএসডি-প্রধান আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ২০-দলীয় জোট বিলুপ্তির পর সেখানকার কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত ১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), লেবার পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। এর সঙ্গে আরও রয়েছে পেশাজীবীদের সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। এ পর্যন্ত গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা, সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মিত্রদের নিয়ে বিএনপি আন্দোলনে আছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এবারের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। আন্দোলন চলছে, ক্রমেই তা বেগবান হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে আমরা বৈঠক করেছি। ঈদের পর আরও বৈঠক হবে। একপর যৌথ ইশতেহার ও আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মূলত আমাদের এক দফার আন্দোলনে যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর