শুক্রবার, ৫ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিস্থিতি দেখতে রাখাইন যাচ্ছেন ২০ রোহিঙ্গা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নে প্রস্তাব চীনের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রত্যাবাসন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে যাচ্ছেন ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা। মূলত রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি কতটুকু প্রত্যাবাসনের অনুকূলে তাই দেখবে এই রোহিঙ্গারা। টেকনাফের নাফ নদ হয়ে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের মংডু শহরে যাবে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, নয়াপাড়া ও জাদিমুড়া এলাকায় অবস্থিত ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাকে বাছাই করা হয়েছে মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দলও সঙ্গে থাকবে। রোহিঙ্গাদের দলটি ফিরে এসে অন্য রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনতে পারবে বলে আশা করছে প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে, তাই তাদের সরেজমিন অভিজ্ঞতা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলটি রাখাইনের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল দেখে আশ্বস্ত হলে তা প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক হবে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, টেকনাফের নাফ নদ হয়ে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারে যাওয়ার কথা রয়েছে। রাতযাপনের জন্য টেকনাফ সদরে তিনটি হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিনিধি দলে আরআরআরসির প্রতিনিধিও থাকবেন।

প্রতিনিধি দলে নাম থাকা ২৬ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা (হেড মাঝি) বজলুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকালে যাত্রা শুরু হবে মংডুর উদ্দেশে। ইতোমধ্যে ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই কথা জানান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে থাকা ২৭ নম্বর ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা আবু সুফিয়ান। বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে গত ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি টানা সাত দিন টেকনাফের স্থলবন্দর রেস্ট হাউসে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন। ২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধি দলটি নাফ নদ পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতার প্রস্তাব চীনের : বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে এই প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং ১ মে মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। পরদিন মঙ্গলবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি ছিল।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান ব্রিটিশ এমপিদের : মিয়ানমারের জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ব্রিটিশ এমপিরা গত মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা’ বিষয়ক এক বিতর্ক সভায় যোগ দেন। বিতর্কটি পরিচালনা করেন বেডফোর্ডের এমপি মোহাম্মদ ইয়াসিন। তিনি গত জানুয়ারিতে কক্সবাজার সফর করেন।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের উদারতার প্রশংসা করেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার জন বারকো। সেই সঙ্গে এই সংকট মোকাবিলায় সবার বাংলাদেশের পাশে থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিতর্কে অংশ নেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী, লাফবরোর এমপি জেন হান্ট, মিড ডার্বিশায়ার থেকে নির্বাচিত এমপি পলিন ল্যাথাম। রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ এই পরিস্থিতির শুরু থেকেই যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ জানান ব্রিটিশ এমপি সারাহ চ্যাম্পিয়ন।

সর্বশেষ খবর