মহামারির ধাক্কায় নতুন করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে বলে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেশে যে পরিবারগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ছিল, করোনা মহামারির সময় মূলত তারাই নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে গবেষণার এসব তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা করেছে। গবেষণা বলছে, দেশে দারিদ্র্য হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, এর মধ্যে করোনাভাইরাসের মহামারির সময় ৯ শতাংশের মতো নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এর আগে এরা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারি না হলে দেশের দারিদ্র্যের হার আরও কমে ১০ শতাংশের আশপাশে নেমে আসতে পারত।গবেষণার তথ্য অনুযায়ী মোট দরিদ্রের প্রায় ৫১ শতাংশ হচ্ছে নতুন দরিদ্র। এদের বেশির ভাগই শহুরে সমাজের। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শহরে কম বিধায় শহরে গরিব বেড়েছে। এতে করে অনেক শিশু শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়েছে। বিনায়ক সেন বলেন, তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারি চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। শিক্ষা ও মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন তথ্য দিয়ে বিনায়ক সেন ঝরে পড়া শিশুদের ফেরাতে বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দেন।
সামগ্রিক দারিদ্র্য কমেছে : সরকারি প্রতিষ্ঠানটির গবেষণার তথ্য অনুযায়ী নতুন দারিদ্র্য বাড়লেও মহামারিকালে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার কমেছে। বিআইডিএস বলছে, ২০১৯ এবং ২০২২ এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে। দারিদ্র্য কমার পাশাপাশি ওই সময় আত্মকর্মসংস্থানও বেড়েছে বলে গবেষণায় জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়। করোনা-পরবর্তী সময় দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। ব্যক্তি সঞ্চয় ও তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস এই দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছে বলে জানায় বিআইডিএস। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য হার কমলেও বৈষম্য নিয়ে চিন্তিত সরকার। তিনি বলেন, প্রত্যেক উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য। আমি মনে করি, এই বৈষম্য আমাদেরই সৃষ্টি। তাই নতুন সম্পদ সৃষ্টি এবং সেই সম্পদ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ন্যায়ভিত্তিক সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।