ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদ সভাপতি এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। প্রকাশ্যে দিনের আলোতেই ভোট হবে। সে নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে- জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন জোটের এই নেতা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। সংবিধানের আলোকেই ভোট হবে। এ নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। দিবালোকেই ভোট হবে। দিনের আলোতে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিএনপি-জামায়াত চক্র ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা অস্বাভাবিক সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। তাদের এ চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। এজন্য স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে করবেন, জোটে থাকবেন নাকি বিকল্প চিন্তা করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা ১৪ দলে আছি। আগামীতেও জোটগতভাবেই ভোটে অংশগ্রহণ করব- এটা আপাতত সিদ্ধান্ত। মহাজোটে যাব কি না অথবা মহাজোট হবে কি না সে বিষয়ে নির্বাচনের সময় সিদ্ধান্ত হবে। কারণ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে অংশগ্রহণ করে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক বিষয়। কাজেই আমরা ১৪-দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর কাছে প্রশ্ন ছিল আগামীতে কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন? জবাবে তিনি জানালেন, ভোটের মাঠে জোটের প্রতীক (আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা) নিয়েও ভোট করা যাবে। আবার আমার দলের (মশাল) নিয়েও ভোট করা যাবে। জোটের প্রতীক নিয়ে ভোট করা যাবে না, এটা তো কোথাও বলা নেই। কারণ আমরা তো জোটগত ভোটে অংশ নেব। তিনি বলেন, জোটে থেকে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। আবার কাস্তে হাতুড়ি নিয়েও কেউ কেউ নির্বাচন করেছেন। আমরাও যে আসনে সমঝোতা হয়নি, সেখানে দলীয় প্রতীক মশাল দিয়েছিলাম। নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে আপাতত ভাবছি না। সময় হলেই ভাবব।
সাড়ে চার বছর সরকার কেমন পরিচালনা করল। বিগত সংসদ নির্বাচনের পর আপনি মন্ত্রিসভায় ছিলেন, এবার নেই। সবকিছু মিলিয়ে কী বলবেন? জবাবে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৪-দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারায় সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ১৪ দলের মূলনীতি বহাল রেখেই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন হচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান সরকার সঠিক পথেই হাঁটছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। দলবাজির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে মানুষ সমস্যায় আছে। এটা বন্ধ করতে হবে। দলবাজি ঘরের ভিতরের শত্রু আর জঙ্গিবাদীরা বাইরের শত্রু। সুতরাং জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, ঘরের ভিতরের শত্রু, দুর্নীতির সিন্ডিকেট আর দলবাজির নামে গুন্ডাতন্ত্র ধ্বংস করে সামনে এগোতে হবে। প্রশাসনের ভিতরে কিছু গাফিলতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, কভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সঠিকভাবে মোকাবিলা করে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু মিলে বললে সাড়ে চার বছর সঠিকভাবেই দেশ পরিচালনা হচ্ছে।
ইনু আরও বলেন, তবে বিপদ কাটেনি। বিপদ হচ্ছে যারা শেখ হাসিনা সরকারের বদলে রাজাকারদের ক্ষমতায় আনতে চায় তারা। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ৫২ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও এখনো বেশ কয়েকটি ঝুঁকি ও বিপদের মধ্যে আছে। এখনো সাংবিধানিক ধারা বানচালের চক্রান্ত চলছে। রাজাকার ও বিএনপি-জামায়াত চক্র অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে, এখনো তারা মীমাংসিত বিষয় অমীমাংসিত করতে চায়। তাই তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জোটের অন্যতম শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, যারাই অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতি করছে তাদের সাজা তো নিশ্চিত করছে বর্তমান সরকার। দলীয় নেতা-কর্মীদেরও ছাড় দিচ্ছে না। যারাই দুর্নীতি-অপকর্ম করছে তাদের গ্রেফতার করে সাজা নিশ্চিত করছে। দুদকের নোটিস যাচ্ছে। তদন্ত হচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের যত নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়ে অথবা সাজাপ্রাপ্ত কারাগারে অতীতের কোনো সরকার আমলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জেল খাটেননি। এটাও একটা নজির শেখ হাসিনা সরকারের। কাজেই দুর্নীতিবাজ-অপকর্মকারীদের জয়জয়কার বলার সুযোগ নেই।
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে মানুষের কল্যাণমুখী অনেক কাজ হাতে নিয়েছে, সেগুলো নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? জবাবে ইনু বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে ১৪ দলের একটি উদ্যোগ ছিল। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে দারিদ্র্য দূরীকরণে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ৫ কোটির বেশি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সুযোগসুবিধা ভোগ করছে। দিন দিন সামাজিক নিরাপত্তার জাল বড় করা হচ্ছে। নারীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিধবা, প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসূচি, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী, হিজড়াদের পুনর্বাসনসহ ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। কৃষিতে ভর্তুকি, শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলোকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। দেশবাসীর উদ্দেশে কী বার্তা দিতে চান- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির হাতে উন্নয়নের কোনো ফরমুলা নেই, কোনো জাদুর কাঠি নেই দুর্নীতি, বৈষম্য ও দলবাজি কমানোর। ওরা (বিএনপি-জামায়াত) যখন ক্ষমতায় ছিল তখন প্রতিটি নেতার পিঠে দুর্নীতির ছাপ ও হাতে দলবাজির রক্ত ছিল। তাই শেখ হাসিনার বিকল্প বিএনপি-জামায়াত হতে পারে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে, সংবিধানের পথে মজবুতভাবে টিকিয়ে রাখব। উন্নয়ন চাইলে মাঝদরিয়ায় মাঝি বদলাতে হয় না। মাঝদরিয়ায় যদি মাঝি বদলান, তাহলে সামাল দিতে পারবেন না। দেশবাসীকে মনে রাখতে হবে।