জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেছেন, দেশে চলমান লোডশেডিং সমাধানের কোনো পথ নেই। এ সংকট উত্তরণে নেই স্বল্পকালীন কোনো সমাধানও। একমাত্র ভরসা এখন আবহাওয়া। যদি আবহাওয়া ভালো হয় তা হলেই হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলবে। এ তাপপ্রবাহ যত দিন চলবে তত দিন দুর্দশাও থাকবে।
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি আরও বলেন, ডিমান্ড সাইড ম্যানেজ করে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতে পারে। ডিমান্ড কমিয়ে যদি লোডশেডিং কিছুটা কমানো যায়। সে ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা লাগবে। আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরবরাহ বাড়াতে পারি। কিন্তু সব তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা চালানো যায় না। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছিল ইন্টারমিডিয়েট এবং পিক আওয়ারের জন্য। নানা রোটেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক চলছে। আর এগুলো একসঙ্গে চালানো যায় না। এ ছাড়া তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ইঞ্জিন দীর্ঘ সময় ধরে চলে না। এগুলোর বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। সন্ধ্যার সময় আমরা পিক লোড ১৪ হাজার মেগাওয়াট সরবরাহ করছি। কিন্তু রাত ১২টা-১টার পর ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। তখন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে রাতেও বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সাধারণত রাতে-দিনে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে। এখন রাতেও তাপমাত্রা দিনের মতো থাকছে, খুব বেশি পার্থক্য হচ্ছে না। রাতেও তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ায় এসি ও ফ্যানের লোড কমছে না। এজন্য সন্ধ্যার পিক আওয়ার ছাড়া দিনে-রাতে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় এক। প্রচণ্ড গরম অদ্ভূত লোড কারভ তৈরি করেছে। এরই মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। পায়রার বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের লোডশেডিং কম হতো।
দেশের খ্যাতনামা এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, এখানে প্রশ্ন উঠছে- পায়রার জন্য শেষ পর্যন্ত এলসি খুলতেই হলো। এখন এলসি খুলে, শিপ ভর্তি করে কয়লা আনতে ২১ দিন লাগছে। এই যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য কয়লা নেই এবং টাকার জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানটি কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে, এটা তো আজকের কথা না। দু-তিন মাস আগে থেকেই তারা সতর্ক করেছিল। আমরা দু-তিন মাস রিজার্ভ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালিয়েছি। মাস তিন আগেই কেন্দ্রটির কয়লা আসা বন্ধ হয়ে গেছে। রিজার্ভ শেষ হয়ে আসছে সেটিও জানা ছিল। তাহলে এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে- কেন আমরা আগে এলসি খুললাম না। শেষ পর্যন্ত এই এলসি তো খুলতেই হলো। কিন্তু এই অতিরিক্ত লোডশেডিং এবং দুর্ভোগ কেন মানুষকে ভোগ করতে হলো? এর মূল কারণ হচ্ছে ডলারের সংকট। এখানে সরকারের ‘অগ্রাধিকারের’ একটা বিষয় আছে। সরকার কয়লার টাকা শোধ করার আগে অন্য জায়গায় টাকা পরিশোধকে গুরুত্ব দিয়েছে। আবার সরকার রিজার্ভও মেইনটেন করতে চাচ্ছে।
অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, যেহেতু আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগ আমদানিনির্ভর এজন্য লোডশেডিংয়ের এ সংকটের সমাধান ম্যাক্রো ইকোনমিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। শুধু জ্বালানির দামের ওপর এ সংকটের সমাধান নির্ভর করবে না। বিশ্বে জ্বালানির দাম এখন কমে এসেছে। কয়লার দাম ৪০০ থেকে ১৩০ ডলারে নেমে এসেছে। এলএনজির দামও ১০ ডলারের নিচে। এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেশি এই যুক্তিও দেখানো যাবে না। গত বছর যেমন বিদেশে জ্বালানির দাম বেশি বলে তা সরকার আনতে পারছে না- এমন যুক্তি দেখানো হয়। তা এবার দেখানো যাবে না। আমাদের ডলারের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে আমরা জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না।