বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, জনগণ এবং জনগণের রাজনীতিই হলো বিএনপির শেষ ভরসা। তাই আসুন, আমরা জনগণকে সঙ্গে রাখি, জনগণের সঙ্গে থাকি। কারণ, জনগণ এবং জনগণের রাজনীতিই হলো আমাদের শেষ ভরসা। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীমের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় কর্মশালায় ৮৫৯ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এ সময় চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদুল্লাহ, উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, তাঁতী দলের সরোয়ার জাহান শ্রাবণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
তারেক রহমান বলেন, আমরা কেউ যদি ভেবে থাকি- আমাদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল মাঠে নেই কিংবা তারা এখন দুর্বল; আমরা সুরসুর করে ক্ষমতায় চলে যাব। তাহলে সেটা চরম ভুল হবে। আল্লাহর ওয়াস্তে এ ধরনের চিন্তাভাবনা মন থেকে সরিয়ে দিন। কারণ, আগামী দিনের যে নির্বাচন- সেটি অতীতের যে কোনো নির্বাচনের থেকে অনেক কঠিন হবে। প্রতিপক্ষ যদি মাঠে থাকত তাহলে নির্বাচন যতটুকু কঠিন হতো- সামনের নির্বাচন আরও বেশি কঠিন হবে। কারণ, এ নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। অদৃশ্য শক্তি ও ষড়যন্ত্র বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হলে আমাদের ধৈর্যশীল হতে হবে। গত ১৬-১৭ বছরে আমরা যে নির্যাতন-অত্যাচার সহ্য করে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি, সামান্য ভুলে যেন আমাদের ত্যাগ নষ্ট না হয়। তারেক রহমান বলেন, এই সেই চট্টগ্রাম- যেখান থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের। আজ এই চট্টগ্রামে আমরা আপনাদের কাছে এসেছি ৩১ দফা নিয়ে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশ পরিচালনায় আমরা আগামী দিনের করণীয় যেসব কর্মসূচি নিয়েছি সেগুলো তুলে ধরতেই এই ৩১ দফা কর্মসূচি। শুধু বিএনপিরই নয়, বরং বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকেই এই ৩১ দফা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি আরও ভালো কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়, সেটিও প্রয়োজনে গ্রহণ করব। বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপির ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। ভবিষ্যতে আমরা দেশের জন্য এ কাজগুলো করতে চাই। আপনারা আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দিন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু কিছু সহকর্মীর মনে এমন একটা ভাব জন্ম নিয়েছে যে- বিএনপি মনে হয় ক্ষমতায় চলেই এসেছে, কিংবা সরকার গঠন করে ফেলেছে। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে- আমরা এখনো বিরোধী দলেই আছি। যেসব সহকর্মী এ ধরনের ভুল উপলব্ধি ধারণ করে আছেন তাদের এই ভুল উপলব্ধির কারণে দল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির একজন প্রতিনিধি হিসেবে এমন কোনো আচরণ বা বিতর্কিত কাজ কারও সঙ্গে করা যাবে না, যাতে আপনার দল বিএনপির ইমেজ নষ্ট হয়। কারণ দুই দিন পর এই আপনিই তাদের কাছে ভোট চাইতে যাবেন। তারেক রহমান বলেন, আমরা ভোট চুরির নির্বাচন, নিশিরাতের নির্বাচন কিংবা ডামি নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি- যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ভয়ে নিরাপদে স্বচ্ছভাবে নিজের ইচ্ছামতো, পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। সেটি করতে হলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। আপনাদের আচার আচরণ সবকিছুতেই পরিবর্তন আনতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা ক্ষমতায় যাবেন না। জনগণ সমর্থন দিলে আপনারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতায় নেবে না। দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে। ক্ষমতায় যাওয়া আর দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়া- এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ক্ষমতা ছাড়া তারা কিচ্ছু বুঝত না বলেই মানুষ তাদের বিদায় করেছে।