পদে ভাগ বসানো নিয়ে প্রশাসনে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করছে। অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা প্রশাসনের পদে মেধার ভিত্তিতে আসতে চাইছেন আর প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেদের পদ অন্যদের দিতে নারাজ। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গতকাল কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে নিজেদের অটুট ঐক্যের জানান দিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের হাজারো কর্মকর্তা। তাদের মতে, একবার বিষয় পছন্দ করে কয়েক বছর পর পরিবর্তন করাটাই অন্যায় এবং বৈষম্যমূলক। কর্মকর্তাদের নানামুখী চাপে পড়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে কর্মকর্তাদের মধ্যে। সরকারের উপসচিব ও যুগ্মসচিব হতে পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসনে ৫০ ভাগ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ ভাগ করার প্রস্তাবনা নিয়ে ফুঁসে ওঠেন সব ক্যাডার কর্মকর্তা। এতদিন বিধিমতো পদোন্নতিতে প্রশাসন ও অন্য ক্যাডার ৭৫ ও ২৫ ভাগ রেশিও ছিল। এখন অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা শতভাগ দাবি করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রশাসন ক্যাডাররা বলছেন, আমাদের শতভাগ থেকে এতদিন ২৫ ভাগ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটা আর দেব না। এটা আমাদের পদ, অন্যের পদে ভাগ বসাচ্ছি না।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিতে আপত্তি নেই, তবে সেটা শুধু প্রশাসনই কেন সে প্রশ্ন উঠেছে। সব ক্যাডারই পঞ্চম গ্রেডে যেতে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে পরীক্ষা ব্যবস্থা থাকার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একটি ক্যাডার পরীক্ষা দিয়ে যাবে অন্য ২৫ ক্যাডার এমনিই পদোন্নতি পাবে এটা মানা হবে না- বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নিজেদের শতভাগ পদ ফেরত দেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচি আসবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ-বাসা) আহ্বানে গতকাল সচিবালয় ও বাইরে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিবসহ হাজারো কর্মকর্তা জড়ো হন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। উপস্থিত অনেকেই জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিবের অতিকথন নিয়ে সমালোচনা করে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাসা নেতৃবৃন্দ জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিবের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করেন। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো মোখলেস উর রহমান বলেন, কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসবে কমিশন। এরপর কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, এর আগে ২৩টা কমিশন হয়েছে। এটা শুধু জনপ্রশাসন কমিশন নয়, এরকম আরও ৬টা কমিশন রয়েছে। সব কমিশনই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এ কমিশনে একটা চূড়ান্ত সাজেশন দেওয়ার আগে বাসার সভাপতি ও জেলা প্রশাসন ঢাকাকে দায়িত্ব দিয়েছি। বাসার সভাপতি বলেন, আমরা কিন্তু কোনো ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে আন্ডারমাইন্ড করছি না। যার যার অবস্থান বা পদ থেকে ওপরে ওঠার যে সুযোগ আছে সেটা অবারিত আছে। সেখানে আমরা কখনো কারও বিরুদ্ধে বলছি না। বাসার অন্য নেতারা বলেন, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত, আমাদের সার্ভিসে কেউ আসবে না আমরাও কারও সার্ভিসে যাব না। কোনো পুল থাকবে না। আমরা কৃষির ডিজি বা পুলিশের এসপি, ডিআইজি হতে চাচ্ছি না। বাসা সভাপতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করব। আমাদের নির্দিষ্ট পদ কেন অন্যদের দেওয়া হবে এটা মানা হবে না। ইতোমধ্যে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আজ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছেন।