নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, প্রার্থী চূড়ান্ত, হলফনামা যাচাইবাছাই এবং সুষ্ঠু অর্থবহ নির্বাচন করার লক্ষ্যে কমিশনকে শক্তিশালী করারও সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ‘আরএফইডি টক’-এ বদিউল আলম এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নির্বাচনি অঙ্গন ও রাজনৈতিক পরিচ্ছন্নতার জন্য একগুচ্ছ সুপারিশ করার কথা বলেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গুম-খুন ও হত্যায় জড়িতরা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যারা গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধী, ফেরারি আসামি, দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে ফেলায় ভূমিকা রেখেছে, তারা যেন নির্বাচনি অঙ্গন থেকে বিতাড়িত হয়, সেই চেষ্টা কমিশনের প্রতিবেদনে রাখা হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ১৫০টি সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কাউকে জোর করে বা অন্যায় করে বা অযাচিতভাবে কাউকে দূরে রাখার চেষ্টা করছি না। ফেরারি, কারাগারে অন্তরিন ছাড়া অন্যরা যেন সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। (যারা আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে) খুনের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে; জনগণ চায় না তারা ক্ষমতায় আসুক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ হতে হবে, আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছ হতে হবে। সদস্যদের কাছ থেকে নেওয়া ফি, অনুদান আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি। দলের ব্যয় ইসিতে দেওয়ার পর তা প্রকাশ করতে হবে। অপরাধে জড়িতদেরকে যেন রাজনৈতিক দলের সদস্য না করে, রাজনৈতিক অঙ্গনও পরিচ্ছন্ন করার সুপারিশ দিয়েছি।
বাস্তবায়ন, পরবর্তী সংসদের জন্য অপেক্ষা : বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনে যে ধরনের সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, এর মধ্যে কতগুলোর ক্ষেত্রে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, যেগুলোর জন্য পরবর্তী সংসদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সেসব বিষয়ে জাতীয় সনদ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। রাজনৈতিক ঐকমত্য করে সনদ স্বাক্ষর করবে। যেগুলোর সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন নেই, নির্বাচনের জন্য দরকার, সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বলেন, যেগুলোতে সংবিধান সংস্কার লাগবে, সংবিধান পরিবর্তন লাগবে, সেগুলো নির্বাচনের আগে করা প্রায় অসম্ভব; এটা তো করা সম্ভব হবে না। এগুলো পরে করতে হবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ আইনকানুন পরিবর্তন করা; এগুলো সংশোধন করা সম্ভব। এগুলো নির্ভর করবে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আলোচনার ওপর।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা বলছি ভবিষ্যতের কথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন আসবে, আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে আর বিশৃঙ্খলা থাকবে না। নির্বাচনি ব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। চার মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হবে।
পুরো প্রতিবেদন জমা দিতে আরও এক মাস : সোমবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, আমরা তো একটা সুপারিশ জমা দিয়েছি, একটা ড্রাফট জমা দিয়েছি। এটাকে আরও পরিশীলিত করে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। পুনরায় এডিট করে এ মাসের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা।