মিথ্যা মামলায় আটকের পর আট মাস ধরে কারাগারে দেশের বিশিষ্ট ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এ আট মাসে তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে। দিলীপের মতো শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তাদের একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার ফলে সারা দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গোটানোর পরিকল্পনা করছেন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিকবারের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার অবদান কম নয়। দেশের স্বর্ণ ব্যবসার নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। শুধু দিলীপ আগরওয়ালা একা নন, তার মতো সারা দেশের শত শত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তারের কারণে ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসেছেন।
জানা গেছে, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানের অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে তিনি কারাগারে থাকায় তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধের পথে। দোকান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ, শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। কোনো প্রকার অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুধু ব্যবসায়িক শত্রুতা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ব্যবসায়িকভাবে তাকে নিঃস্ব করার উদ্দেশ্যেই একশ্রেণির মামলাবাজ লোক প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাদীর অজান্তেই দিলীপের নাম আসামির তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। কর্মচারীরা জানান, তিনি কোনোমতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন না, তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের খাবার, পানীয়সহ ছাতা সরবরাহ করেছেন। তারপরও দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে শেরেবাংলা থানায় মামলা নং : ২১(০৩)২৫, উত্তরা পূর্ব থানা, মামলা নং : ০১(১১)২৪, গুলশান থানা, মামলা নং : ১০(০৯)২৪, উত্তরা পূর্ব থানা, মামলা নং : ১১(১২)২৪, মিরপুর থানা, মামলা নং : ১৩(০৯)২৪, গুলশান থানা, মামলা নং : ১৭(১২)২৪, কোতোয়ালি থানা, মামলা নং : ১৮(০৩)২৫ হত্যা মামলা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তিনি পাঁচবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছেন, সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন একটানা ৯ বার। দিলীপের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীও নিয়মিত কর পরিশোধ করে রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তার সরাসরি হস্তক্ষেপ ও তদারকি ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সব সময় দেশের সব দুর্যোগে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। বারবার তার জামিন আবেদন করলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
গত দুই বছর ধরে নানারকম শারীরিক অসুস্থতা আরও জটিল হওয়ার কারণে তিনি বহুবার বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় আদালত তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ও কিডনিজনিত রোগে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই কয়েক দিনের পর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেন। এতে বর্তমানে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় এবং দেশের শিল্প তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে সাজানো মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে অবিলম্বে জামিন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্মীরা।