কক্সবাজারের উখিয়ায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা চোখে অশ্রু আর বুকভরা ক্ষোভ নিয়ে পালন করেছে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ন্যায়বিচার আদায়ের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হয়। প্লে-কার্ড ফেস্টুন ব্যানার নিয়ে সমাবেশে যোগদান করে রোহিঙ্গারা। তাদের কণ্ঠে ছিল মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আকুতি।
ক্যাম্প-৯ এর ডি ব্লকের বলি বাজার মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুফতি আনিস। নেতৃত্ব দেন এফডিএমএন সদস্য মাস্টার সাদেক ও আরএসও নেতা মৌলভী মোহাম্মদ নূর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হেড মাঝি আবদুল আমিন, ডা. জুবায়ের, রহমত উল্লাহ, সাদেক হোসেন, আহমেদ, ইউসুফ, হেলাল (কায়ু মাইং), মোলভী বনি আমিন, নজিমুল্লাহ, মুফতি আনিস, মোলভী সাদেক, ক্যাম্প-৯ এর শমসু নূর এবং ক্যাম্প-১১ এর আরএসও সদস্য সায়েদুল আমিনসহ অন্যান্য নেতারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আরাকানে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস অধ্যায়গুলোর একটি। তারা অভিযোগ করেন, রাখাইনের মগ বাহিনী ও মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, হাজারো নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং লাখো মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। বক্তারা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিচার ও টেকসই সমাধানের আহ্বান জানান। শেষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিহত রোহিঙ্গাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মোলভী জুবায়ের। শুধু ক্যাম্প-৯ নয়, একই উদ্দেশে উখিয়ার অন্যান্য ক্যাম্পেও পালিত হয় গণহত্যা দিবস। ক্যাম্প-১/ডব্লিউ লাম্বাশিয়ায় আরসিপিআর নেতা দীল মোহাম্মদের নেতৃত্বে আয়োজিত কর্মসূচিতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অংশ নেন। এ ছাড়া ক্যাম্প-৪, ক্যাম্প-৯ এবং ক্যাম্প-১৭ তেও ব্যাপক গণজমায়েত হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে উর্খিয়া টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সেই ভয়াল দিনটির স্মৃতিই আজও রোহিঙ্গাদের কাছে রক্তাক্ত ইতিহাস হয়ে আছে। প্রতি বছর এ দিনে তারা গণহত্যা দিবস পালন করে আসছে।