ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের বিপরীতে সাড়ে ৪২ হাজার সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় পর্যায়ে এসব ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভোট কেন্দ্র বাড়ানোর পাশাপাশি ভোটকক্ষ কমানোর পরিকলল্পনা নিয়েছে।
এক্ষেত্রে দুই বছর আগের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ভোট কেন্দ্র বেড়েছে মাত্র ৪৬৮টি আর ভোটকক্ষ কমেছে ১৭ হাজার ৪২৬টির মতো। বর্তমানে ১২ কোটি ৬৩ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশের পর ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি-আপত্তি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ১২ অক্টোবরের মধ্যে তা নিষ্পত্তি এবং ২০ অক্টোবর সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে। তফসিল হলে ভোটের তারিখের অন্তত ২৫ দিন আগে আসনভিত্তিক ভোট কেন্দ্রের তালিকা (কেন্দ্রের নাম, ভোটার, ভোটকক্ষ সংখ্যা) গেজেট আকারে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব বলেছেন, খসড়া তালিকা অনুযায়ী সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৬১৮টি; এর মধ্যে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। ভোটকক্ষের মধ্যে পুরুষের জন্য ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৯টি আর নারী ভোটকক্ষ ১ লাখ ২৯ হাজার ১০৭টি। গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোট কেন্দ্রের বিধান বহাল রাখা হলেও নতুন নীতিমালায় পুরুষ ও নারী ভোটকক্ষের ক্ষেত্রে সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী এবার ৬০০ পুরুষ ভোটার এবং ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। আগে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্রে ৫০০ জন পুরুষ ভোটার ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি করে কক্ষ নির্ধারণের বিধান ছিল। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ১১ কোটি ৯১ লাখ ভোটারের বিপরীতে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ১৫০টি; সেখানে ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৪৭২টি।
সিসি ক্যামেরা ও বডি ক্যামে সায় নেই ইসির : সরকারের ইচ্ছা থাকলেও সিসিটিভি ক্যামেরা ও বডিওর্ন ক্যামেরার বিষয়ে ‘করণীয় কিছু নেই’ বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে ইসি জানিয়ে দিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পুলিশের বডিওর্ন ক্যামেরা নিয়ে কমিশনের কিছু করার নেই। ইসির উপসচিব রাশেদুল ইসলামের সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ইসির করণীয় জানতে চিঠি দিয়েছিল। ইসি সেই চিঠির জবাবে বলেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন লজিস্টিক্যাল ইস্যু ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নবিষয়ক সভার কার্যবিবরণীর আলোচ্যসূচি ৯-এর প্রেক্ষিতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও বডিওর্ন ক্যামেরার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে ‘করণীয় কিছু নেই’ মর্মে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। গত ৯ জুলাই নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সভায় সরকারপ্রধান একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন; সেগুলোর মধ্যে ছিল ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য করণীয় অনুসন্ধান, ভোট কেন্দ্রকে সিসিটিভির আওতায় আনা।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সিসি ক্যামেরা নিয়ে তার কমিশন ভাবছে না। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ও পুলিশকে বডি ক্যামেরা দেওয়ার কথা বলেছেন। ৭ আগস্ট এই নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহারকে ‘যৌক্তিক মনে করছে না’ ইসি। তিনি বলেন, সেটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। চাইলেই তো হবে না। এটা নিয়ে অলরেডি আমরা তিন চারটি মিটিং করেছি। এক দিনের জন্য আউটসোর্স করেও পাওয়া যায় না ভাড়াতে। আবার কেনাও যৌক্তিক নয়। ৪৫ হাজার কেন্দ্র, হিসাব করে দেখেন কতগুলো সিসি ক্যামেরা লাগবে। এটা কিনে আপনি রাখবেন কীভাবে? এটা জাস্টিফাই করবেন কীভাবে?