বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ছয়টি বড় ধরনের ঝুঁকির কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী থাকলেও আগামী বছর বড় ধরনের মন্দার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
গতকাল ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এটি উপস্থাপনা করেন সংস্থার সিনিয়র অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিসকা ওন্সর্গে এবং বাংলাদেশ-ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর জঁ পেসমে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতির ছয়টি প্রধান ঝুঁকি হলো- ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংস্কার বাস্তবায়নে বিলম্ব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিঘ্ন, প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতিতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, আর তার আগের বছর ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও বেসরকারি ভোগব্যয় বৃদ্ধির ফলে এই প্রবৃদ্ধি আসবে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগ প্রবাহ মন্থর থাকতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হলেও ২০২৬ সালে তা কমে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রভাবে শ্রমবাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে যা প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ ফেলবে। সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সহসভাপতি জোহানেস জুট বলেন, দক্ষিণ এশিয়া এখনো বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধিশীল অঞ্চল হলেও ঝুঁকি মোকাবিলায় আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, বেসরকারি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা, এআই-এর সুফল গ্রহণ এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানো জরুরি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে কম উন্মুক্ত অঞ্চলগুলোর একটি দক্ষিণ এশিয়া। উচ্চ শুল্কের কারণে উৎপাদন খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। ধাপে ধাপে শুল্ক কমানো ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণ বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এ সময় মূল্যস্ফীতি কমে প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে এবং জাতীয় দারিদ্র্যের হার কমে ১৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে এই অগ্রগতি নির্ভর করবে সংস্কার বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশের উন্নতির ওপর। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমদানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় চলতি হিসাব আবার ঘাটতিতে যেতে পারে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও সরকারি ঋণের পরিমাণ ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপির প্রায় ৪১ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছাবে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের যৌথ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ঋণ সংকটের ঝুঁকি এখন ‘নিম্ন’ থেকে বেড়ে ‘মধ্যম’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।