বাংলাদেশে চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কার উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও তুরস্কের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বেরিস একিনচি।
বিবৃতিতে বলা হয়, উষ্ণ, সৌহার্দপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে যে সংস্কার কার্যক্রম চলছে, তাতে তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। তুরস্কের তরফে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যাত্রায় তুরস্কের সহযোগিতা কামনা করা হয়। উভয়পক্ষ প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে বলা হয়, জ্বালানি খাতে অংশীদারির সম্ভাবনা নিয়ে দুই দেশই একমত। তুরস্কের গ্রিন এনার্জিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সম্প্রসারিত সহযোগিতায় উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে। জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্য খাতে তুরস্কের ধারাবাহিক সহায়তা এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে ফিল্ড হাসপাতালের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য তুরস্কের প্রতি বাংলাদেশের তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আঙ্কারার অব্যাহত রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ঢাকা। গাজায় চলমান গণহত্যার ঘটনায় উভয়পক্ষ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা ও ডি-৮ সহ বহুপক্ষীয় ফোরামে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। গত সোমবার সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন তুরস্কের পররাষ্ট্র সচিব। প্রথম দিন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ : তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত বেরিস একিনচি গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পৌঁছে দেন এবং প্রধান উপদেষ্টাকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে তুরস্ক সফরের জন্য প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণের কথা জানান।
সাক্ষাৎকালে উভয় পক্ষ বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তি খাতে নতুন অংশীদারির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত একিনচি বলেন, ‘এটি আমার বাংলাদেশের প্রথম সফর।’ তাঁর প্রতিনিধিদলের প্রতি প্রদত্ত উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তার জন্য তিনি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তুরস্কের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি নিকট ভবিষ্যতে তুরস্ক সফরে যেতে আগ্রহী। দুই দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিতে চাই। জুলাই বিদ্রোহের পর এটি একটি নতুন সূচনা। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তিসহ অনেক খাতে আমাদের দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’ প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লবে আহত সাতজন বাংলাদেশিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তুরস্ক সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত একিনচি বলেন, ‘তুরস্ক সব সময় শিক্ষাকে উৎসাহিত করে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিময় কর্মসূচি প্রদান করে থাকে।’