২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৩:৩০

অটিজম নিয়ে কিছু কথা

এম এ হক

অটিজম নিয়ে কিছু কথা

এম এ হক। ফাইল ছবি

অটিজমের কারণ :

মাতৃগর্ভে মানব ভ্রুণ সৃষ্টির শুরু থেকেই তার মধ্যে নেগেটিভ ও পজিটিভ দু’টি ফ্যাক্টর কাজ করে। দু’টি ফ্যাক্টরের মধ্যে যে ফ্যাক্টরটি জয়লাভ করে সেটির প্রভাবই আমাদের শরীর ও মনে প্রতিফলিত হয়। পিতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ শুক্রাণুর মাধ্যমে এবং মাতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ ডিম্বাণুর মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে, সন্তান পিতা-মাতার বংশের জেনেটিক পজিটিভ ও নেগেটিভ ফ্যাক্টর নিয়ে বেড়ে ওঠে। মাতার গর্ভধারণের সময় থেকেই এই ক্রিয়া শুরু হয় এবং মাতার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ও ফ্যাক্টরসমূহকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। এভাবেই শরীরের মধ্যে জটিল প্যাথোলজি তৈরি হয়, মাতার গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের সন্তানের মধ্যে নেগেটিভ ফ্যাক্টর জোরালো থাকলে গর্ভের সন্তান এবরশন হওয়া অথবা অসুস্থ সন্তান ভূমিষ্ট হতে পারে। এভাবে যখন নেগেটিভ ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত ভূমিষ্ট হওয়া একটি শিশুর ক্রমোজম এবং মস্তিষ্কের নিউরোণের মধ্যে যখন জটিলতা তৈরি হয় তখন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। এ ধরনের শিশুকেই আমরা অটিজমে আক্রান্ত শিশু বলি।

অটিজমে কি ঘটে :
প্রতিটি মানুষের ২৩ জোড়া ক্রমোজম থাকে। অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির ২১ নং ক্রমোজম ত্রুটিযুক্ত হয়। ফলে তার নিউরো-ডেভেলপমেন্ট বা মনোবিকাশের সমস্যা হয়। ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারার কারণে শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোণসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক হবে।

চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথিতে অটিজম শিশুদের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসায় শিশুদের বুদ্ধি, ধৈর্য, আই-কট্রাক্ট, শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি হয়। এছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণও স্বাভাবিক হয়। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরুর পর রোগীর মানসিক উন্নতি হলে, আগের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এ পরিবর্তন প্রথম দিকে ধীরে-ধীরে হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় সাধারণত রোগীর ‘মায়াজমের’ দিকে খেয়াল রেখে প্রধানত থুজা, মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, টিউবারকুলিনাম, কার্সিনোসিন, হাইড্রোফোবিনাম, সোরিনাম, সালফার, ক্যালকেরিয়া-কার্ব, ক্যালকেরিয়া-ফস, অ্যাগারিকাস, বিউফোরানা, ন্যাট্রাম-মিউর, ন্যাট্রাম-সালফ ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অটিজম শিশুর অবিভাবকদের সচেতনতা সৃষ্টি ও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরিয়ে আনতেই আজকের এ প্রচেষ্টা। 

লেখক:  পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। নিউরো-সাইকিয়াট্রি গবেষক ও চিকিৎসক।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর