শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীতে সকাল-সন্ধ্যার স্বাস্থ্য সোপান

ডা. সজল আশফাক

শীতে সকাল-সন্ধ্যার স্বাস্থ্য সোপান

শীতের সময় যত রকম স্বাস্থ্য সমস্যা নতুন করে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে, তার মধ্যে নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং  শ্বাসকষ্টের সমস্যা অন্যতম। আর এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা আছে যেগুলো সারা বছরই একজন রোগীকে আক্রান্ত করে থাকে কিন্তু শীতে সেগুলোর তীব্রতা বাড়ে। এ ধরনের তীব্রতা বাড়া স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, নাকের অ্যালার্জি, টনসিলের প্রদাহ অন্যতম। তবে গেঁটে বাতের সমস্যাও বাড়ে শীতের সময়ে। 

সে যাই হোক, শীতের সময়ে যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো মানুষকে বাড়তি কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়, সেগুলোর অধিকাংশেরই সূচনা হয় সকাল ও সন্ধ্যাবেলায়। সকাল ও সন্ধ্যায় বিশেষভাবে আক্রান্তের কারণ হলো, সারা দিনের তুলনায় এ সময়টাতে পরিবেশ বিরাজ করে থাকে। তাছাড়া এ সময়ে লোকজনও এমন কিছু করে থাকে যে কারণে হঠাৎ করেই একজন ব্যক্তি নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা, কানব্যথা, কান বন্ধের সমস্যায় পতিত হয়।

এবার দেখা যাক কি কি ভুল কাজ করার ফলে একজন সুস্থ মানুষ হঠাৎ অসুখের বেড়াজালে আটকা পড়ে যান।

১. শীতের মৌসুমে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় অনেকেই হুট করে কোনোরকম গরম কাপড়-চোপড় ছাড়াই বিছানা ছাড়েন। হঠাৎই এভাবে নিজেকে গরম পরিবেশ থেকে ঠাণ্ডায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি শরীর সামলাতে পারে না। ফলাফল,  হাঁচি-সর্দি, কাশি।

২. এছাড়া বিছানা ছেড়ে নামার সময় অনেকে পাদুকা খুঁজে না পেয়ে খালি পায়ে শীতের সকালে কিছুটা সময় হাঁটতে থাকেন। এক্ষেত্রেও পরিণতি আগের মতো।

৩. শীতের সকালে অনেকেই ঘুম থেকে জেগে মুখ ধোয়ার জন্য ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করেন। এ ঠাণ্ডা পানি নাকে দেওয়া মাত্রই কারও কারও নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে শুরু হয় হাঁচি, যা চলতে থাকে সারাটা দিন কিংবা তার চেয়েও বেশি সময়। তাই সাবধান।

৪. শীতের দিনগুলোতে সারাটা দিন তেমন বিশেষ ঠাণ্ডা পরিবেশ না থাকার কারণে অনেকেই রাতের জন্য গরম কাপড় ও জুতা পরে বের হন না। ফলে দেখা যায় সন্ধ্যা নামতেই মাথাব্যথা, কানব্যথা, গলাব্যথা,  হাঁচি শুরু হয়ে গেছে।

৫. উল্লিখিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো যাদের রয়েছে তাদের উচিত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ যেমন- মন্টিলুকাস্ট গ্রহণ করা শুরু করতে হবে। কারণ শীতের সকাল-সন্ধ্যার স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বেশিরভাগই অ্যালার্জিজনিত। এছাড়া যাদের হাঁপানি রয়েছে তারা স্টেরয়েড জাতীয় ইনহেলার ব্যবহার শুরু করতে হবে শীত আসার আগেই। তবে এসব একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে গ্রহণ করা উচিত। 

৬. গলাব্যথা তা যে কারণেই হোক, উষ্ণ পানিতে লবণ দিয়ে দৈনিক ৩/৪ বার গড়গড়া করার বিকল্প নেই। শীতে সকাল ও সন্ধ্যায় বছরের অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি ঠাণ্ডা পরিবেশ থাকে। সেই ঠাণ্ডা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শরীরকে একটু সময় দিতে হবে। দরকার পড়লে  সকালে অজু কিংবা মুখ ধোয়ার জন্য গরম পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, দরকার পড়লে গরম পানি পান করতে হবে। নাকে ঠাণ্ডা পানি দেওয়া যাবে না। পায়ে মোজা, বিশেষ ধরনের পাদুকা, জুতা, গলায় গলা বন্ধনী, মাথায় ক্যাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। এদেশের মানুষ শাড়ি-লুঙ্গি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু শীতের পোশাক হিসেবে এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। শীতের জন্য টাইটস কিংবা প্যান্টই উত্তম। আর শেষ কথা হলো, হঠাৎ করেই নিজেকে শীতের সকাল ও সন্ধ্যার ঠাণ্ডায় অরক্ষিত অবস্থায় মেলে ধরা যাবে না। নিতে হবে মাথা থেকে পা অব্দি শীত থেকে রক্ষার প্রস্তুতি।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর