বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ইস্পাত শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ চাই

আলী হোসাইন আকবর আলী এফসিএ, চেয়ারম্যান, বিএসআরএম

মুহাম্মদ সেলিম

ইস্পাত শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ চাই

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ কী?

আলী হোসাইন : বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের ইস্পাত শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তবে এ শিল্পের সম্প্রসারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও আকৃষ্টের নানান পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগের আরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ কোনো শিল্পের সম্প্রচারণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ এবং অনুকূল পরিবেশ। পাশাপাশি বিনিয়োগে কাগজপত্রের প্রসিডিউর আরও সহজ করতে হবে। সব কিছু ব্যবসা করার মতো অনুকূল হলে বিদেশিরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিনিয়োগের জন্য। বাড়বে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন।   

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আগামী ১০ বছর পর বিএসআরএমকে কোন জায়গায় দেখতে চান?

আলী হোসাইন : কোয়ালিটি রড সরবরাহে দেশে যেভাবে অবদান রাখছে বিএসআরএম, ঠিক সেভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রড রপ্তানি করতে চাই আমরা। ইস্পাত শিল্পে আমরা ৭০ বছর ধরে অবদান রাখছি। এটা ধরে রাখতে চাই আরও অনেক বছর। 

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দক্ষতার সমন্বয় করে ইস্পাত শিল্পকে দিন দিন সম্প্রসারণ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। শুধু আমরা ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছি না। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে মানবিক কর্মকান্ডের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ‘সিএসআর ফান্ড’ আরও বৃদ্ধি করে সমাজ উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

ব্যবসার পাশাপাশি মানবিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়াই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের মাথায় ইস্পাত শিল্প সম্প্রসারণ নিয়ে অনেক বড় বড় পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার যদি আমাদের সুযোগ দেয়, ঠিক মতো অর্নার করে তাহলে এ চিন্তাগুলোর বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেব। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের উন্নয়ন হবে। মানুষের উন্নয়ন হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ইস্পাত শিল্প সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতাগুলো কি কি?

আলী হোসাইন : ইস্পাত শিল্প সম্প্রসারণের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু কিছু সরকারি দফতর পুরোপুরি প্রযুক্তির আওতায় না আসা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, কাঁচামাল নিয়ে যথাসময়ে বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পারা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে না পারা। প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকার চাইলে ব্যবসায়ী নেতা, শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করতে পারে।

ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা বসে সমস্যা চিহ্নিত করলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে কোনো সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব কিছু নয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে কথায় কথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন করার কথা উঠে আসছে। কিন্তু আমি মনে করি, বুলেট ট্রেন না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ আগে করা উচিত। বুলেট ট্রেনে যত টাকা লাগবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তত টাকা লাগবে না। এটা প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে হতে পারে। মাত্র তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই এটা করা সম্ভব। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক শিল্পকারখানা সম্প্রসারণে ভালোই কাজ দেবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিদেশে রড রপ্তানি নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

আলী হোসাইন : দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বর্তমানে ভারতেও কোয়ালিটি রড রপ্তানি করছি আমরা। ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোয়ালিটি রড রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। অদূর ভবিষ্যতে বিদেশে রড রপ্তানির প্রস্তুতি নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের ইস্পাত শিল্পে কতটুকু অবদান রাখছে বিএসআরএম?

আলী হোসাইন : দেশের বিভিন্ন প্রকল্পের চাহিদার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কোয়ালিটি রড সরবরাহ করছে বিএসআরএম। রোড ডেভেলপমেন্ট, এয়ারপোর্ট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে আমাদের রড। এখন বড় বড় প্রকল্পের জন্য আমাদের রড আমদানি করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা সাশ্রয়ী দরে সরকার দেশীয় কোয়ালিটি রড পাচ্ছে। আমরা দেশের রাজস্বতেও আড়াই হাজার কোটি টাকা অবদান রাখছি প্রতি বছর। ভ্যাট ট্যাক্স বাবদ এ টাকাগুলো প্রতি বছর দেওয়া হয়। আগামীতে এ অঙ্ক বাড়বে এটা বলতে পারি। পাশাপাশি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সামাজিক কর্মকান্ডগুলোও চালিয়ে যাচ্ছে বিএসআরএম।

সর্বশেষ খবর