শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেড় শ বছরের বাজারে সুনসান নীরবতা

বাজারটি এখন ভূতেরবাড়ি মনে হয়

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

দেড় শ বছরের বাজারে সুনসান নীরবতা

নদীর নাম ‘বুড়ি নদী’। স্থানীয়রা বলেন বুড়ি গাং। এই নদীর তীরে দেড় শ বছর আগে বাজার বসা শুরু হয়। নদীতে নৌকাযোগে ক্রেতারা আসতেন বিভিন্ন জেলা থেকে। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, নোয়াখালী ও চাঁদপুর থেকে আসত পাট ও নানা পণ্যবোঝাই নৌকা। সেই দৃশ্য এখন রূপকথায় ঠাঁই নিয়েছে। বাজারটির অবস্থান কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নে। নাম সিদ্ধিগঞ্জ বাজার। বাজারের পাশে বুড়ি নদী। নদীর ওপাড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা। এই বাজারে এখন নেই ক্রেতা- বিক্রেতা। নেই কোলাহল। নেমেছে সুনসান নীরবতা। পাঁচ বছর আগে বাজারটি বন্ধ হয়ে গেছে। বাজার নয় যেন পরিত্যক্ত জনপদ। জলপথ সংকুচিত ও সড়ক যোগাযোগ ভালো না হওয়ায় বাজারে ক্রেতা কমেছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

মঙ্গলবার বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শান্ত জলের স্নিগ্ধ নদী বুড়ি। বট গাছের নিচে বাঁধা ছোট কয়েকটি নৌকা। বাজারে দুই শতাধিক দোকান থাকলেও মাত্র দুটি দোকান এখনো নিভু নিভু প্রদীপের মতো চালু আছে।

এদিকে বাজারের কোনো দোকান পাকা দোতলা। কোনোটি টিনের দোতলা। কিছু দোকানের সাইনবোর্ড এখনো অক্ষত। দরজা-জানালা নেই। কিছু দোকান বার্ধক্যে কাত হয়ে পড়ে আছে। কোনো দোকানের খালি ভিটি পড়ে আছে। ভাঙা দোকানের ওপরে বড় বড় বট আর কৃষ্ণচূড়া পাখির মতো ডানা মেলে ছায়া দিচ্ছে। বাজারে চরছে গরু-ছাগল। রয়েছে খড়ের গাদা। কিছু দোকানে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বাজারের উত্তর ও পশ্চিম পাশে মন্দির ও মসজিদ রয়েছে। মন্দির বন্ধ রয়েছে। মসজিদেও তেমন মুসল্লি নেই। বাজারের কোণে একটি ভবনে রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য সংখ্যা বেশিই মনে হয়েছে। এখানে এলে শীতল পরিবেশে বসে আপনার মনে দোলা দেবে জমজমাট বাজারের কোলাহল।

পাশের সোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু মুসা ভুঁইয়া বলেন, এই বাজারে এলে মন খারাপ হয়ে যায়। এখানে আট বছর বয়স থেকে আসতাম। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বাজার করতাম। সকালে তাজা সবজি আর নদীর তাজা মাছ মিলত এখানে। হাটবারে গাছের তলে বসত ১২ জনের বেশি নাপিত। ছিল গাছ চিরানোর স’মিল। মিষ্টির দোকান, ডেকোরেটর, কাপড়, মুদি ও মনোহারি দোকান। দেশে দিন দিন বাজার বাড়ছে। অথচ এই বাজারটি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসন চাইলে সামনের সড়ক মেরামত ও প্রচারণা চালালে আবারও বাজারটি জমে উঠতে পারে।

মুদি মালামাল ও ডিজেল বিক্রেতা মো. হোসেন বলেন, আমি ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করি। বাজারে এখন মাত্র দুটি দোকান রয়েছে। ক্রেতা না আসায় ব্যবসায়ীরা অন্য বাজারে চলে গেছেন। বাজারটি মাঝেমধ্যে মৃতের বাড়ি বলে মনে হয়। আমরা চাই আবার বাজারটি চালু হোক। শোনা যাক ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক।

চা দোকানি আন্দিকুট গ্রামের বাসিন্দা শামছুল হক বলেন, ৫০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাই পড়ে আছি। মাঝেমধ্যে কথা বলার মানুষও পাওয়া যায় না।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনি বলেন, স্থানীয়দের আগ্রহে একটি বাজার জমে ওঠে। আবার তারা না এলে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধিগঞ্জ বাজার পরিদর্শন করব। সড়ক সংস্কারসহ কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ভেবে ব্যবস্থা নেব।

সর্বশেষ খবর