নির্বাচনে হেরে গেলে ট্রাম্প কারচুপির অভিযোগ আনবেন কিনা এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গতকাল বিবিসি অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে এমনই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বরে যদি তিনি প্রেসিডেন্ট না হতে পারেন তাহলে বিজয়ী প্রার্থীকে ক্রমাগতভাবে খাটো করার অবিশ্বাস্য রাজনীতির কোনো কলুষিত ধারা তিনি চালু করবেন কিনা তাই এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার কাণ্ডকারখানা দেখে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এমনটাই জল্পনা-কল্পনা করতে বসেছেন।
অনেকে স্মরণ করছেন যে, ২০০০ সালে বুশ বনাম আল গোর যে সংকটের অবসান হলো, সেখানে আল গোরের জায়গায় একজন ট্রাম্প থাকলে কি ঘটতো? সুপ্রিম কোর্টের বিতর্কিত রায় আল গোর নীরবে মাথা পেতে নিয়ে বুশকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প এবার কি করে বসবেন তা নিয়ে নির্বাচনী পণ্ডিতরা এখনই চুল ছিঁড়তে শুরু করে দিয়েছেন। কারণ ট্রাম্পের পক্ষে এমন কিছু নেই যা উচ্চারণ করা অসম্ভব।
রাজনীতিতে বাক-বিতণ্ডা সর্বত্রই ঘটে। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনে যা কখনও কেউ ভাবেনি, সেটাই তিনি করে বসবেন কিনা তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। বিবিসি অনলাইন বলেছে, ‘জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা করে তার দেয়া বক্তব্য ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে।’ ট্রাম্প ও তার সমর্থক বাহিনীর ভরাডুবি এখন অনেকেই সময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন। কেউ কেউ তার মধ্যে এক ধরনের ক্ষ্যাপাটে ভাব দেখতে পাচ্ছেন। এমনকি সিনিয়র পার্টি নেতা জ্যান হালপার-হেজ বলেছেন, ট্রাম্প ‘মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভারসাম্যহীন’ বা ‘সাইকোলজিক্যালি আনব্যালেন্সড।’
রিপাবলিকান দলের যে কোনো প্রার্থীর ক্যাম্পেইনে সব থেকে বড় ভূমিকা যাদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত তারা হলেন, হাউস স্পিকার পল রিয়ান ও সিনেটর জন ম্যাককেইন। ট্রাম্প এই দুজনের সঙ্গেই খারাপ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে রিপাবলিকান দলে বিভক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।
গতকাল আইওয়া থেকে এপি’র খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার দুটি মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান শিবিরে পরিষ্কার বিভক্তির মুখোমুখি হয়েছেন। আইওয়ার নেতারা বলেছেন, তারা ট্রাম্পের সঙ্গে অপরাহ্ণের সারিতে যোগ দেবেন। অন্যদিকে প্রতিবেশী উইসকনসিন, যেখানে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, সেখানকার নেতারা বলেছেন, তারা ট্রাম্পের সঙ্গে প্রস্তাবিত সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারবেন না, কারণ তারা ‘অন্যবিধ’ কাজে’ ভীষণ ব্যস্ত। ‘আমরা উইসকনসিনের রিপাবলিকান, ট্রাম্প রিপাবলিকান’ নই,’ প্রকাশ্যে এই মন্তব্য করেছেন উইসকনসিন অ্যাসেম্বলির স্পিকার রবিন। তিনি তার অন্যান্য রিপাবলিকান সহযোগীদের কাছে একটি খোলা চিঠিতে এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
নিউজার্সির পলিটিকারে শুক্রবার লেখা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান রিচার্ড হান্না ইতিমধ্যে ট্রাম্প বিদ্রোহীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তিনি হিলারি ক্লিনটনকে ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। এরপর নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস, যাকে এতদিন ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের অন্যতম মনে করা হয়েছে, তিনি এখন বেসুরো মন্তব্য করছেন। বলেছেন, সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের পরিবারের সঙ্গে ট্রাম্প যে বিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন তা ‘অযথাযথ।’
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে রিপাবলিক্যান এসেম্বলিম্যান জ্যাক সিয়াতারেলি এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়ার নিন্দা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের অন্তর্গত নিকৃষ্টতম এক ভীতি ও বীতরাগ। তিনি আমাদের আমেরিকান মূল্যবোধের একেবারেই বাইরে।’ নিউজার্সির অপর রিপাবলিকান দলীয় এসেম্বলিম্যান মারিয়া রডরিগো বলেন, আগামী নভেম্বরে ট্রাম্পকে ভোট দিতে তিনি নিজকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবেন না। রিপাবলিক্যান ডোনার মেগ হুইটম্যান স্বপক্ষ ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, ট্রাম্পকে ভোট দেব না। কারণ তিনি যেভাবে বাক-বিতণ্ডা শুরু করছেন তা জাতীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি। হুইটম্যান হিলারির পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
বিবিসি’র অপর এক খবর বলেছে, সাবেক রিপাবলিক্যান নেতা জন লিবুটলিয়ার বলেছেন, বহু রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পকে নয়, হিলারিকে ভোট দেবেন। কিন্তু দমার পাত্র নন ট্রাম্প। তিনি এক টুইটারে দাবি করেছেন, ‘তার দল এতটাই ঐক্যবদ্ধ যা এর আগে কেউ দেখেনি।’ সে কারণেই কারো কারো শংকা, তিনি যদি নির্বাচনে হেরে যান, তা হলে তার সমর্থকরা কারচুপির অভিযোগ সত্য বলে মনে করতে পারেন। তখন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন ট্রাম্প।
বিডি প্রতিদিন/৭ আগষ্ট ২০১৬/হিমেল-১০