‘লেট দেম ইন’, ‘ব্যান-ডেথ’ ‘উই আর আমেরিকান-উই স্টে হিয়ার’ ইত্যাদি স্লোগানে জেএফকে বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। হাজারো ক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামের অভিবাসন এবং মুসলিম বিদ্বেষমূলক নির্বাহী আদেশ।
স্বতস্ফুর্ত এই বিক্ষোভে অংশ নেয়া বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক লীগের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার বলেন, ‘এমন জঘন্য আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্বের সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে সংঘাতে লিপ্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমন কি গ্রীনকার্ডধারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।'
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘সমগ্র কম্যুনিটিতে ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে। অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠা আমেরিকায় ট্রাম্পের এমন আদেশে লজ্জা পাচ্ছে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ও। ম্যানহাটান সংলগ্ন লিবার্টি আইল্যান্ডে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাচু অব লিবার্টি সারাক্ষণ মানবতার জয়গানের পাশাপাশি অভিবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছে।’
গ্রীনকার্ডধারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হচ্ছে-এমন সংবাদ জানার পর মুক্ত-বিবেকের চলচ্চিত্রকার মাইকেল ম্যুর টুইট বার্তায় শনিবার অপরাহ্নে সকলকে জেএফকে বিমানবন্দরে সমবেত হবার আহ্বান জানান। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুই সহস্রাধিক নারী-পুরুষ জড়ো হন ৪ নম্বর টার্মিনালে। মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াতকারী সবকটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এই টার্মিনালে অবতরণ করে।
নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সংগঠন ‘নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্স’র বিপুলসংখ্যক সদস্যও জেএফকে বিমানবন্দরে বিক্ষোভে অংশ নেন। এর অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশি।
তবে আয়োজক হিসেবে বিশেষ কোনো সংগঠনের ব্যানার ছিল না। ছিল শুধু প্লেকার্ড। ৪ তলা বিশিষ্ট এ টার্মিনালের প্রতিটি ফ্লোর বিক্ষোভকারীদের দখলে ছিল। তবে সকলেই শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান ও মতামত ব্যক্ত করায় নিরাপত্তারক্ষীরা কাউকে বিরক্ত করেনি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হুইল চেয়ারে ভর দিয়ে আসা লোকজনও ছিলেন।
ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হলেও এই বিক্ষোভে সকল জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের উপস্থিতি ঘটে। দুপুরে স্বতস্ফুর্ত এ বিক্ষোভে অংশ নেন স্থানীয় কংগ্রেসম্যান জেরাল্ড নেদলার এবং নিদিয়া ভ্যালেস্কুয়েজ। তারা ডেমক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেসম্যান এবং বিক্ষোভকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিপত্র তথা ‘গ্রীনকার্ড’ ধারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়ার পরিবর্তে গ্রেফতারের সংবাদে সকল মহল ক্ষুব্ধ। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন মুসলিম-আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত কেয়ারের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে।’
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, নিষিদ্ধ ৭ দেশের গ্রীনকার্ডধারীরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পাবেন না। নির্বাহী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরে তারাও আটক হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আগামী ৯০ দিন পর্যন্ত এ বিধি বহাল থাকবে বলেও হোয়াইট হাউজ উল্লেখ করেছে।
‘উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতে নতুন এই ভেটিং ব্যবস্থা চালু’র নির্দেশে ৭ দেশকে চিহ্নিত করা হলেও ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে অপর মুসলিম দেশকেও একই দৃষ্টিতে দেখা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ করা হচ্ছে। এ কারণে, বাংলাদেশি গ্রীনকার্ডধারীরাও আপাতত: বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা বাতিল করছেন।
উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি ট্র্যাভেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘নাটাব’ প্রেসিডেন্ট ও নিউইয়র্কে সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহৎ ট্র্যাভেল এজেন্সি ‘ওয়াল্ডওয়াইড ট্র্যাভেলস’র মালিক নাজমুল হুদা শনিবার সন্ধ্যায় এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘বেশ কয়েকজন ফোন করে তাদের যাত্রা অনির্দিষ্টকালের জন্যে স্থগিত করতে বলেছেন। কয়েকজন বাতিল করেছেন সামনের সপ্তাহে ঢাকা যাবার টিকিটও।’
তবে গ্রীনকার্ডধারী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা কোনো অপরাধে লিপ্ত ছিলেন না বা এখনও নেই, তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণে কোনো সংশয় থাকা উচিত নয় বলে এনআরবি নিউজের এ সংবাদদাতাকে জানান ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্নি মঈন চৌধুরী।
জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণের পর মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রসমূহের নাগরিক হিসেবে। তাদের কয়েকজনের কাছে গ্রীনকার্ড ছিল।
একইভাবে লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, শিকাগোর ও’হেরা, ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ডালেস বিমানবন্দরেও শতশত নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেছেন। বেশ কয়েকজনকে আটক করার সংবাদ পেয়ে তাদের এটর্নিরা বিমানবন্দরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দেন-দরবার করছেন বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সংগঠন ‘নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্স’র বিপুলসংখ্যক সদস্যও জেএফকে বিমানবন্দরের বিক্ষোভে অংশ নেন। এর অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশি।
বিডি প্রতিদিন/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/এনায়েত করিম
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ