দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে তাকে সংসদে বলতে দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযোগ তুলে রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) প্রধান মায়াবতী। মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যসভার স্পীকার পি.জে.ক্যুরিয়নের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এরপর বিকালে পাঁচটা নাগাদ রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল শামশের শরিফে’এর কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন মায়াবতী। ওই ইস্তফাপত্রে পদত্যাগের কারণও উল্লেখ করেছেন মায়াবতী। মায়াবতী জানান, যেখানে কেন্দ্রের শাসকদল কিছু বলার সময় দেয় না সেখানে ইস্তফা দেওয়াটাই উপযুক্ত কাজ। যদিও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আইন মেনে এক লাইনে পদত্যাগপত্র লিখলে তবেই গ্রহণযোগ্য হবে।
এর আগে, এদিন রাজ্যসভার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরু হতেই উত্তর প্রদেশে দলিতদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বলতে ওঠেন মায়াবতী। নিয়ম মেনে ৩ মিনিট পর তাঁকে থামিয়ে দেন স্পীকার পি.জি.ক্যুরিয়ন। এতেই চটে যান মায়াবতী। তিনি বলেন, তাঁকে বলতে না দেওয়া হলে ইস্তফা দেবেন। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়াক আউট করেন বিএসপি নেত্রী। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভায় হট্টগোল বাধিয়ে দেয় বিরোধীরা। মোদি সরকারের দলিত-বিরোধী রাজনীতি বিরুদ্ধে বিজেপি নেতা সতীশ মিশ্রের নেতৃত্বে নিয়ে স্লোগানও দেয় বিএসপি’র অন্য নেতারা। ওয়েলে নেমে এসে ‘দলিত বিরোধী ইয়ে সরকার নেহি চলেগি, নেহি চলেগি’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। শেষমেষ অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হন স্পিকার।
বিজেপিকে দলিত বিরোধী হিসাবে আখ্যায়িত করে মায়াবতীর অভিযোগ, ‘বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হায়দরাবাদের শিক্ষার্থী রোহিত ভেমুলা থেকে দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা শুর হয়েছে। এরপর গোরক্ষার নামে হামলা শুরু হয়েছে। পরে উত্তরপ্রদেশে ভোটে ইভিএম গরমিল করা হয়েছে’।
রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকাল বাকি ছিল মায়াবতীর। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিএসপিকে বিপর্যস্ত করেছে বিজেপি। ৪০৩ আসনের বিধানসভায় বিএসপির দখলে মাত্র ১৮টি আসন। এই পরিস্থিতিতে নিজের দলে জিতে রাজ্যসভায় যাওয়ার উপায় নেই মায়াবতীর কাছে। ফলে মেয়াদ শেষের ৯ মাস আগে ইস্তফা দিয়ে নিজেকে দলিতের বন্ধু প্রমাণে পাশার চাল দিলেন মায়াবতী। অন্তত এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ ৯ মাস পর এমনিতেই সাংসদ পদে ইস্তফা দিতে হত তাঁকে। আর সেই ইস্তফায় কোনও রাজনৈতিক ফায়দাও মিলত না বরং দলিতদের কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে আগাম ইস্তফা দেওয়ায় একদিকে যেমন হারানো ভোটব্যাংক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রইল, তেমনই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য অফুরন্ত সময় হাতে থাকলো ভারতীয় রাজনীতির বহেনজি’র (মায়াবতীকে এই নামেই ডাকা হয়)।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব