থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে দায়ের করা দায়িত্বে অবহেলা সংক্রান্ত মামলার রায়ের দিন পিছিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন উচ্চ আদালত। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় এটি জারি করা হলো। রায়ে তার কারাদণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজ শুক্রবার তার মামলার রায়ের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থাকায় রায়ের দিন পুননির্ধারণ হয়। খবর এএফপি’র।
এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্ত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ইংলাকের হাজার হাজার সমর্থক তাকে এক নজর দেখার জন্য সেখানে জড়ো হলেও থাইল্যান্ডের প্রথম এ নারী প্রধানমন্ত্রী আদালতে হাজির হননি।
এ মামলার প্রধান বিচারক চীপ চুলামন আদালতকে বলেন, ‘ইংলাকের আইনজীবীরা জানান তিনি অসুস্থ। তারা এ রায় বিলম্ব করার আবেদন জানিয়েছেন। তবে আদালত বিশ্বাস করে না যে তিনি অসুস্থ। তাই তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় আদালত ইংলাকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায়ের দিন পুনঃনির্ধারণ করেছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ইংলাক সরকারের পতন ঘটে। চালে ভর্তুকি কর্মসূচি বিষয়ে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় ইংলাক অভিযুক্ত হলে তার ১০ বছরের সাজা হতে পারে এবং তিনি আজীবনের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হতে পারেন।
দীর্ঘ-বিলম্বিত এই রায়কে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক-বিভক্ত এই দেশটিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
ব্যাংকক মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, এ রায়কে কেন্দ্র করে আদালত চত্ত্বরে প্রায় চার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে।
চালে ভর্তুকির কর্মসূচিটি ছিল ইংলাক প্রশাসনের প্রধান একটি নীতি। ওই কর্মসূচিতে কৃষকদের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি মূল্যে ধান কেনা হয়। এই কর্মসূচিটি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। এই কর্মসূচির কারণে দেশটিতে চালের বিশাল মজুত সৃষ্টি হয় এবং লোকসান হয় ৮০০ কোটি ডলার।
ইংলাক ওই কর্মসূচিতে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ওই কর্মসূচির দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তিনি ছিলেন না।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ইংলাক বলেন, ‘আমি সততার সঙ্গে আইন অনুযায়ী সরকার পরিচালনা করেছি।’
তিনি বলেন, উৎপাদনকারী কৃষকদের চালের মূল্য হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব এবং ঋণ থেকে মুক্তি দিতে তিনি এ ভর্তুকি প্রকল্প চালু করেন। ইংলাকের দাবি, তার এ পদক্ষেপে ১৮ লাখ কৃষক উপকৃত হয়।
২০১৪ সালের ২২ মে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার মাত্র কয়েক দিন আগে আদালতের এক বিতর্কিত আদেশে ক্ষমতাচ্যুত হন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ২০১১ সালে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
ইংলাক স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন।
বিডি প্রতিদিন/২৫ আগস্ট ২০১৭/এনায়েত করিম