পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। তিন বছর শেষে আবারও কে হোয়াইট হাউস পরিচালনা করবেন, তার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ বছরজুড়ে চলবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনে দলীয় টিকিট পেতে দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের যেতে হয়। আর এটিই ‘প্রাইমারি’ ও ‘ককাস’ নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি রাজ্যের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান সমর্থকরা নির্ধারণ করেন কারা তাদের দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন। এ প্রক্রিয়া আজ থেকে আইওয়া ককাসের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে। শেষ হবে ৭ জুন পুয়ের্তো রিকোর প্রাইমারিতে।
ককাস ও প্রাইমারি পার্থক্য : প্রাইমারি হলো প্রথাগত নির্বাচন, যেখানে দিনব্যাপী নাগরিকরা গোপন ব্যালটে ভোট দেন। প্রাইমারিতে বিজয়ী প্রার্থী ওই রাজ্যের নিজ দলীয় প্রতিনিধিদের জাতীয় সম্মেলনে নিজের পক্ষে ভোট দিতে নিয়ে যান।
আর ককাস হচ্ছে দলের নিবন্ধিত ভোটার ও কর্মীদের সভা, যা পূর্বনির্ধারিত দিন ও ক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টার এ সভায় প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলে। পরে তারা ভোটের আয়োজন করে একজন প্রার্থী নির্বাচন করেন। কাউন্টি পর্যায়ের সম্মেলনে ওই প্রার্থীকে সমর্থন দিতে প্রতিনিধিও নির্বাচন করা হয়।
প্রথম ধাপ-প্রার্থিতা ঘোষণা : প্রথম ধাপে মনোনয়নে নাম লেখানো। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৮ জন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন।
কিন্তু ফান্ড সংকট, জনগণের রোষানল এবং নিজ জনপ্রিয়তার ভরসা না পেয়ে ইতিমধ্যে ১৬ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। ‘প্রাইমারি’ পর্যায়ে ১২ জন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী রয়েছেন। নিয়মানুসারে, তাদের মধ্যেই একজনই মনোনয়ন পাবেন। রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী তালিকায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ পাঁচজন।
দ্বিতীয় ধাপ-আইওয়া ককাস : আইওয়া রাজ্য দিয়েই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু। এ কারণে আইওয়া ককাসের গুরুত্ব খুবই বেশি। এ রাজ্যে প্রার্থী বাছাইয়ে ককাস শুরু হবে আজ। শুরুর জয় যে কোনো প্রার্থীর জন্য আগামী ককাস ও প্রাইমারিগুলোতে বড় জয় এনে দিতে পারে।
তবে এখানে জয় মানেই আবার বড় কিছু না-ও হতে পারে। যেমন আগের নির্বাচনগুলোতে মাইক হুকাবি, রিক স্যান্ডোরাম ও টেড ক্রুজ আইওয়া ককাসে জিতলেও তারা চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি।
তৃতীয় ধাপ- নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারি : ১১ ফেব্রুয়ারি নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রথম প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ছোট্ট রাজ্যটির ১৩ লাখ বাসিন্দা প্রাইমারি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
ককাস-প্রাইমারি কাজ করে কীভাবে? : ককাস ও প্রাইমারিতে বেশি ভোট পাওয়া মানে বেশি সংখ্যক ‘প্রতিনিধি’ পাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রাজ্যে প্রতিনিধির সংখ্যা আলাদা। এবার প্রত্যেক প্রার্থীকে ‘প্রতিনিধি’ জিততে হলে প্রত্যি ককাস ও প্রাইমারিতে অন্তত ১৫ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন হবে।
চতুর্থ ধাপ-সুপার টিউসডে : এটি সেই দিন, যেদিন বেশিরভাগ রাজ্য এবং টেরিটরি তাদের প্রাইমারি নির্বাচন অথবা ককাসের আয়োজন করে থাকে। এ বছর সুপার টিউসডে ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন ১৬টি রাজ্য ও টেরিটরিতে ককাস ও প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। সুপার টিউসডের পর পরিষ্কার হয়ে যাবে- ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হচ্ছেন কে?
পঞ্চম ধাপ- তিন মাস চলবে ককাস-প্রাইমারি : এক সপ্তাহের বিরতির পর আরেকটি ব্যস্ততম দিন ১০ মার্চ। এদিন ছয় রাজ্যে ৩৫২ জন প্রতিনিধি বাছাইয়ে ককাস ও প্রাইমারি হবে। এভাবে ককাস ও প্রাইমারি চলবে আরও প্রায় তিন মাস।
ষষ্ঠ ধাপ- জাতীয় সম্মেলন : ডোনাল্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে অনেকটা নিশ্চিত। ২৪-২৭ আগস্টে নর্থ ক্যারোলিনার চার্লটে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এর আগে ১৩-১৬ জুলাইয়ে উইসকনসিনের মিলওয়াউকিতে অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্রেটিক দলের সম্মেলন।
জাতীয় সম্মেলন কীভাবে কাজ করে? : জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগে রাজ্যগুলোতে ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রতিনিধি (ডেলিগেট) নির্বাচিত করে জাতীয় সম্মেলনে পাঠানো হয়। দলীয় প্রতিনিধিরা সেখানে ভোট দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করেন।
রাজ্যের ভোটাররা শুধু প্রাইমারি বা দলীয় ককাসে তাদের মতামত সরাসরি দিতে পারেন। যেমন, ডেমোক্রেটিক দলের প্রতিনিধি রয়েছেন তিন হাজার ৯৭৯ জন। প্রাইমারি ও ককাসে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ প্রতিনিধি (১,৯৯০) জয় করতে পারেন তিনি জাতীয় সম্মেলনে ভোটের জন্য মনোনীত হবেন।
৫০ শতাংশের প্রতিনিধি না পেলে তাকে ‘কনটেসটেড বা ব্রোকার্ড সম্মেলন’ বলা হয়। সেখানে আরও ৭৭১ জন সুপার ডেলিগেট অংশ নেবেন। তারা হলেন দলের সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
সপ্তম ধাপ-নির্বাচন : এই ধাপে বাকি থাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেটি অনুষ্ঠিত হবে ৩ নভেম্বর। ২১ জানুয়ারি অভিষেক।
বিডি প্রতিদি/আল আমীন