২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২২:২৮

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপন বৈঠকের দাবি, তেহরানের প্রতিক্রিয়া

অনলাইন ডেস্ক

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপন বৈঠকের দাবি, তেহরানের প্রতিক্রিয়া

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবযাদ

কুয়েতের সাময়িকী 'আল জারিদে' সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে 'পরমাণু বিষয়ে চূড়ান্ত ও নতুন সমঝোতায় উপনীত হবার ব্যাপারে ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছে। এমনকি দু'পক্ষই সহযোগিতামূলক চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত রয়েছে।'

এ ধরনের খবর অস্বীকার করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবযাদে বলেছেন, ইরান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি এবং এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা কেবলমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে মাত্র। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কিংবা ইরান-মার্কিন সম্পর্কের ধরণের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বচ্ছ ধারণা নেই উল্লেখ করে সাঈদ খাতিবযাদে আরো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই তার ভুল স্বীকার করে নিতে হবে, ইরানবিরোধী নির্যাতনমূলক নিষেধাজ্ঞা ও একতরফা বেআইনি যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং অন্যায় নিষেধাজ্ঞা কারণে ইরানের যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে হবে। তাহলেই কেবল পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

বাস্তবতা হচ্ছে, আমেরিকা কখনোই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতিমালা মেনে চলতে আগ্রহী নয়। যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে এবং ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে। ইরানকে কাবু করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কোন বেআইনি কর্মকাণ্ড নেই যা তিনি করেন নি। এ অবস্থায় ইরান আমেরিকার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে পারে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী প্রায় এক বছর আগে ছাত্র ও শিক্ষকদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার যে চেষ্টা করছে তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ববাসীকে এটা দেখানো যে ওই দেশটির ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির কৌশল কাজে এসেছে।' সর্বোচ্চ নেতা বেশকিছু শর্তে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ব্যাপারে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে, যদি অনুতপ্ত হয় এবং পরমাণু সমঝোতায় পুরোপুরি ফিরে আসে তাহলেই কেবল অন্য কোন দেশের উপস্থিতিতে বা আন্তর্জাতিক কোনো ফোরামে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এর অন্যথায় নিউইয়র্ক বা অন্য কোথাও ইরান ও আমেরিকার কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেই আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই।'

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য আলোচনা করা নয় বরং আলোচনার নামে বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়া ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকায় এবং করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ব্যর্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। এমনকি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং নিরাপত্তা পরিষদেও আমেরিকা অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ক ইরানের বিশ্লেষক মোহাম্মদ মারান্দি ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে গোপন বৈঠকের ব্যাপারে প্রকাশিত খবরের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'মার্কিন কর্মকর্তারা একক বিজয় চান এবং তারা উভয় পক্ষের বিজয়ের নীতিতে বিশ্বাসী নন। জনমত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন না ট্রাম্প। সে কারণে ইরানের সঙ্গে গোপন আলোচনার ব্যাপারে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। এর পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দু'টি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত তিনি প্রমাণ করতে চান হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার কাছে ইরান আত্মসমর্পণ করেছে। আর  দ্বিতীয়ত উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেভাবেই হোক ইরানকে আলোচনার টেবিলে টেনে এনে আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় ফায়দা হাসিল করা।

প্রকৃতপক্ষে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আসল চেহারা শুধু ইরানের জনগণের কাছেই নয় একইসঙ্গে খোদ আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা ইরানের ব্যাপারে একের পর এক ভুল করলেও ওই নীতিতেই তারা অটল রয়েছেন। ইরানের সঙ্গে আমেরিকার গোপন আলোচনার খবর প্রচার করে তারা আবারো ভুল পথে পা বাড়ালো।

সূত্র: পার্সটুডে 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর