কাবুলে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রী হানিফ আতমারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাতে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনোভ মস্কোয় অনুষ্ঠেয় শান্তি আলোচনায় আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন পদস্থ নেতাকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আসছে ১৮ মার্চ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকের লক্ষ্য হল তালেবানদের সঙ্গে আফগান সরকারের আলোচক দলকে সমঝোতায় পৌঁছতে এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্য তাড়া দেওয়া। রাশিয়ার আয়োজনে এটা আফগান শান্তি আলোচনা বিষয়ক তৃতীয় বৈঠক।
একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে আফগান সরকারের ওপর মার্কিন চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আফগানিস্তানের নেতৃবৃন্দ ও জনগণ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিরোধী। কিছুদিন আগে রাশিয়ার বিশেষ প্রতিনিধি জামির কাবলভ আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বক্তব্য রেখেছিলেন। ওই বক্তব্যের ব্যাপক বিরোধিতার মুখে এখন মস্কোয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাবলভ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকে সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত উপায় এবং একইসঙ্গে পরবর্তী সরকারে তালেবানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ছিল মার্কিন দাবি। এখন রাশিয়াও এই দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারা বলছে, বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনের উপায় হল অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা।
অপরদিকে তালেবানরা অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষ নয়। তারা চাচ্ছে তাদের সেই ইসলামি ইমারাত গঠন করতে। আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের সঙ্গে তালেবানের মতানৈক্যের মূল কারণ এটাই। সরকার বলছে, তালেবানরা আবার ক্ষমতায় যাবার পাঁয়তারা করছে। সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য হল- তালেবানের ক্ষমতায় যাবার একমাত্র বৈধ উপায় হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়। কিন্তু তালেবান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মানে নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে চায় এবং তাদের সেই আগেকার তথাকথিত ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। তাদের রাষ্ট্রকাঠামোয় জনগণের কোনও ভূমিকা থাকে না। নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের কোনও অধিকার জনগণের থাকে না। তালেবানি সরকারে অন্য কারও স্থান থাকে না। তাদের আমিরই এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার ভোগ করে। তারা তাই ভোটের পক্ষে নয়। আমিরের ক্ষমতার কোনও মেয়াদও থাকে না। আজীবন আমির থাকে। যার ফলে এই ব্যবস্থায় চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও একক ক্ষমতা চর্চা হয়। এসব কারণে ইতোমধ্যেই কাবুলের জনগণ তালেবানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে মিছিল করেছে। তালেবানের এই উচ্চাভিলাষের কারণে কোনও শান্তি আলোচনাই ফল বয়ে আনবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম