অপ্রতিরোধ্য তালেবানের কাবুলে প্রবেশের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবরে বলা হয়েছে, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তাজিকিস্তানে চলে গেছেন।
এর মধ্য দিয়ে অবশেষে পতন হলো রাজধানী কাবুলেরও। চার পাশ থেকে বাঁধ ভাঙা নদীর পানির মতোই সেখানে ঢুকে পড়েছে তালেবান। বিনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। মাত্র ৪৫ মিনিটের বৈঠক। তার পরেই ক্ষমতার হস্তান্তর হল। এখন অভিষেক ঘটতে চলেছে আরেক গনির।
তালিবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার হতে পারেন আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট। রবিবার সকাল থেকেই আফগান প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির ছিলেন এই তালিবান প্রধান। সেখানে আশরাফ গনি ও আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তারপরই চূড়ান্ত হয় সমঝোতা। এখন ক্ষমতা গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশটির ইসলামপন্থী তালেবান গোষ্ঠী।
এখন সবার আগ্রহ তালেবান আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে। অবশ্য তালেবান গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড সব সময় গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে। এমনকি ১৯৯৬-২০০১ সালের ছয় বছরব্যাপী শাসনকালেও তাদের অনেক বিষয় সাধারণ মানুষের অন্তরালে ছিল। বার্তা সংস্থা এএফপির সূত্রে তালেবান নেতৃবৃন্দের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা : তালেবান প্রধান
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন হামলায় সাবেক তালেবানপ্রধান মোল্লা আখতার মনসুর নিহত হন। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত হন মৌলবি হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তিনি দ্রুততর সময়ে ক্ষমতা রূপান্তর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন।
তালেবানের শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার আগে আখুন্দজাদা একজন সাধারণ পর্যায়ের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাই অনেকের ধারণা, একজন সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালনের চেয়ে তিনি আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তালেবান নেতা হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর আখুন্দজাদা আল-কায়েদাপ্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির কাছ থেকে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি লাভ করেন। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন আল জাওয়াহিরি। এমনকি তাকে আমিরুল মুমিনিন বলে অভিহিত করেছিলেন। এ স্বীকৃতি তার দীর্ঘকালের লড়াই কার্যক্রমে ব্যাপক সহায়তা করে।
মোল্লা আবদুল গনি বারাদার : তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা
আবদুল আবদুল গনি বারাদার কান্দাহার প্রদেশের বাসিন্দা। মূলত এখানেই তালেবান আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত হামলার ফলে অধিকাংশ আফগান নাগরিকের মতো বারাদারের জীবনও পুরোপুরি বদলে যায়। তিনিও সক্রিয় বিদ্রোহী হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। মোল্লা ওমরের সঙ্গে তিনি পাশাপাশি যুদ্ধ করেছেন বলে অনেকের ধারণা।
১৯৯৪ সালে সোভিয়েত শাসনের পতন পরবর্তী গৃহযুদ্ধের বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির মধ্যে পুনরায় তালেবান আন্দোলন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয়। ধারণা করা হয়, ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর বারাদার একটি ক্ষুদ্র বিদ্রোহী দলের মধ্যে কাজ করেন। তিনি পরবর্তীকালের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কাছে চিঠির মারফত একটি সম্ভাব্য চুক্তির রূপরেখা প্রদান করেন। যেন সশস্ত্র দলগুলোর পক্ষে নতুন প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
২০১০ সালে বারদারকে পাকিস্তানে আটক করা হয়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁকে কাতারে স্থানান্তরিত করা হয়। কাতারে বারাদার তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রত্যাহার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের তদারকি করেন।
সিরাজুদ্দিন হাক্কানি : হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান
সোভিয়েতবিরোধী অভিযানের অন্যতম নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানির সন্তান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। সিরাজুদ্দিন হাক্কানি একই সঙ্গে তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কে শীর্ষ পদের দায়িত্ব পালন করছেন।
হাক্কানি নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত একটি সশস্ত্র দল। গত দুই দশক যাবৎ দলটি আফগান ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ হামলা চালায়। এ দলটিকে সবচেয়ে বিপজ্জনক গোষ্ঠী হিসেবে দেখে আসছে মার্কিন নেতৃবৃন্দ।
স্বাধীনচেতা, যুদ্ধবিগ্রহে দক্ষতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য পারদর্শিতার কারণে হাক্কানি পরিবার ব্যাপক পরিচিত। মনে করা হয়, পূর্ব আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ে হাক্কানি দলটি অপারেশনের তদারকির দায়িত্ব পালন করে। তাই তালেবান নেতৃবৃন্দের ওপর দলটির উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।
সূত্র : ডন
বিডি-প্রতিদিন/শফিক