আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের পক্ষে জোর গলায় যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন "অন্য আরেকটি দেশ পুনর্নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রয়োগের যুগের" অবসান ঘটানোর কথা ঘোষণা করেছেন।
১১ সেপ্টেম্বর-পরবর্তী বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং কোনো যুদ্ধে যাওয়ার আগে পরিষ্কার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। তবে জাতি কিংবা রাষ্ট্র গঠনে তার দেশ আর জড়িত হবে না।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিনি স্থলযুদ্ধ পরিহার করবেন। কোনো দেশে বিশাল সৈন্য বাহিনী মোতায়েনের পরিবর্তে তিনি জোর দেবেন কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর।
বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে এখন অর্থনৈতিক ও সাইবার নিরাপত্তার প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি মনে করেন বিশাল সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে, যেমনটা আফগানিস্তানে করা হয়েছে, সেরকম না করে বরং সামরিক প্রযুক্তির সাহায্যে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে হবে।
তার ভাষায়, "অন্য কোনো দেশের মাটিতে এখন আর সৈন্যদের পা ফেলার প্রয়োজন নেই।"
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ২০তম বার্ষিকীর মাত্র ১১ দিন আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাষণে এসব কথা ঘোষণা করেন। ওই হামলার জের ধরেই আমেরিকা আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল।
আমেরিকা কি আর যুদ্ধে জড়াবে না?
যুক্তরাষ্ট্রের যখন তখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দেশের ভেতরে তাত্ত্বিক আলোচনা চলছে। কথাবার্তা হচ্ছে নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও। বিশেষ করে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য ছাড়া রাষ্ট্র কিংবা জাতি গঠনের ব্যাপারে দেশটির যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার কথা বলা হচ্ছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনামলে যুদ্ধ-কবলিত বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং এ বিষয়ে আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছান।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন এবং বলেছেন, "এই সিদ্ধান্ত শুধু আফগানিস্তানের বিষয়ে নয়, এই সিদ্ধান্ত অন্য কোনো দেশ পুনর্গঠনে সামরিক অভিযান অবসানের ব্যাপারেও।"
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক ড. আলী রীয়াজ মনে করেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো যুদ্ধে জড়িত হবে না- এরকমটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
নতুন যুগ?
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে "নতুন যুগ" বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার আগের তিনজন প্রেসিডেন্ট যেভাবে আফগানিস্তান এবং ইরাক পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেছেন সেরকম করার আর কোনো অবকাশ নেই।
বদলে যাচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি
দীর্ঘ দুই দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত আমেরিকা ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার গভীর রাতে সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের শেষ সৈন্য ও কূটনীতিককে কাবুল থেকে তুলে নিয়ে যায়।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সৈন্য প্রত্যাহারের এই প্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনার মধ্যেই সেনা প্রত্যাহারের একদিন পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জো বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধ শেষ করার এই সিদ্ধান্তের জন্য আমেরিকার জনগণ তাকে মনে রাখবে এবং যেভাবে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে সেটা আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, আমেরিকাকে এখন অন্য বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আফগানিস্তান যুদ্ধ শেষ হওয়ার কারণে আমেরিকা এখন চীন ও রাশিয়ার ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারবে।
তিনি বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব আমেরিকাকে রক্ষা করা। ২০০১ সালের হুমকির বিরুদ্ধে নয়, বরং ২০২১ সাল এবং ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবেলা করাই তার কাজ।
জো বাইডেন বলেন, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই অব্যাহত থাকবে। তবে "এজন্য স্থলযুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজন নেই," বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে দেশটি ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান-যেখানেই যুদ্ধে জড়িয়েছে তার কোনটিতেই তারা সফল হতে পারেনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন