বর্তমানে যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশি ইউক্রেনের। তবে ইউক্রেনকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের মিত্ররা।
এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্ত হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটও তাদের মোকাবিলায় সেখানে সৈন্য পাঠানো শুরু করেছে।
তবে এর মধ্যে আলোচনাও চলছে এই সংকটকে কূটনৈতিকভাবে নিরসনের। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই মুহূর্তে ইউক্রেন সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- রাশিয়ার মোকাবিলা করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য কত বড় চ্যালেঞ্জ।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে একনায়ক স্বৈরাচারী শাসকদের চ্যালেঞ্জ করার যে নীতি বাইডেন নিয়েছেন - তার সাফল্য-ব্যর্থতাও অনেকটাই নির্ধারিত হবে ইউক্রেন পরিস্থিতির কী পরিণতি হয় তার ওপর।
তবে এক্ষেত্রে তুরুপের তাস হিসেবে বাইডেন ইউরোপকে ব্যবহার করছেন। সেজন্য তিনি গোটা ইউরোপকে এক প্লাট ফর্মে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত। এতে সফল হলে রাশিয়ার জন্য তা হবে বড়ই ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক পরিণতি। আর ব্যর্থ হলে ভীষণ চাপে পড়বেন বাইডেন তথা আমেরিকা।
এদিকে, জো বাইডেন সোজা-সাপটা কথা বলার মানুষ। তিনি জুয়াড়িদের মত ধাপ্পায় অভ্যস্ত নন। কিন্তু তার হাতেও খেলার মত তুরুপের তাস রয়েছে। কিন্তু সেই তাস কি?
তিনি ইউক্রেন এবং ন্যাটোর সম্প্রসারণ ইস্যুতে পশ্চিম ইউরোপের সাথে এমন একটি ঐক্য তৈরি করেছেন- যা হয়তো ক্রেমলিন ধারণা করতে পারেনি। পশ্চিমা জোটের কাছ থেকে এই শক্ত প্রতিক্রিয়ার কারণে পুতিনক হয়তো একটু রয়ে-সয়ে এগোনোর কথা ভাবতে হচ্ছে।
পুতিনের নীতিও বাইডেনকে এই ঐক্য তৈরিতে সাহায্য করেছে। তার ক্রমাগত সৈন্য সমাবেশ এবং পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো তৎপরতা হ্রাসের দাবির কারণে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরির পক্ষে মিত্রদের রাজি করানো সহজ হয়েছে। তারা হয়তো নতুন করে ভাবছে যে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটো জোট এখনও প্রাসঙ্গিক, এখনও প্রয়োজন।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মতভেদ
তবে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
কখন সেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে এবং তার আওতা কতটা বিস্তৃত হবে তা নিয়ে ইউরোপের অনেক দেশই দ্বিধাগ্রস্ত। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের পথে না গিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে চাপ তৈরির কৌশল নেয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ইউরোপে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি কঠিন হবে।
রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া খুব সহজ নয় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য। এতে অনেক ঝুঁকি রয়েছে।
বাইডেন তা জানেন এবং সে কারণে তার প্রশাসন ন্যাটোতে ইউক্রেনকে নিষিদ্ধ করার দাবি না মানলেও ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে মস্কোর সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও সেই প্রস্তাবের সাথে পুতিনের দাবির বিস্তর ফারাক।
তবে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনকে কখনওই নেওয়া চলবে না বলে যে দাবি প্রেসিডেন্ট পুতিন করেছেন- সে ব্যাপারে কোনও একটি প্রতিশ্রুতি ছাড়া তিনি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে আনবেন এমন সম্ভাবনা কম। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/কালাম