শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

১০ বছরের বেশি হলেই গুলি করে মিয়ানমারের সেনা

১০ বছরের বেশি হলেই গুলি করে মিয়ানমারের সেনা

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন শুরু হয়েছে। আর এই নির্যাতনের মূলে রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। যদিও দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যমান। ক্ষমতায় আছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল। কিন্তু শত শত মানুষ হত্যার পরও তিনি নীরব। ফলে তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার আন্দোলন শুরু হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী এমনই নির্দয় আচরণ করছে যে কোনো মানুষের বয়স ১০ বছরের বেশি হলেই তাকে নির্বিবাদে গুলি করছে। কোনো নারীর দেখা পেলেই তাকে ধর্ষণ করছে। এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালানোর চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের মাথায় একটাই চিন্তা; কীভাবে নরককুণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা যায়? সেই নরক থেকে বেরিয়ে আসা একজন লালু বেগম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘১০ বছরের অধিক বয়সের  কোনো বালককে পেলেই তারা হত্যা করে। পুরুষদের  সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’ ওই নারী জানান, তাদের সম্প্রদায়ের নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে। লালু বেগম বলেন, ‘সেনাবাহিনী যখন আসে তখন আমরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই। আমি জানি না আমার স্বামী জীবিত আছেন নাকি মৃত।’

লালু বেগম বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি সিএনএনকে জানান, তার গ্রামের বহু নারী সরকারি সেনাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। লালু বেগম বলেন, ‘তারা যখন কোনো সুন্দরী নারী দেখে তখন তাদের কাছে পানি চায়। এরপর তারা ঘরে ঢুকে তাদের ধর্ষণ করে।’

রাখাইন রাজ্যে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস। জাতিসংঘের ভাষায় এরা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। এমনকি বংশপরম্পরায় হাজার বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পর্যন্ত প্রদান করে না মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি পর্যন্ত ব্যবহার করতে রাজি নয়। তারা এ সম্প্রদায়ের মানুষদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ বহু মানুষই মিয়ানমারে তাদের পূর্বপুরুষদের শিকড় প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। লালু বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রাম যখন জ্বালিয়ে  দেওয়া হয় তখন আমরা অন্য গ্রামে চলে যাই। অব্যাহতভাবে অবস্থান বদলাতে থাকি। এভাবে আসতে আসতে আমরা নদীতীরে আসি।’ তিনি বলেন, এই আসার পথে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। লালু বেগমের ভাবী নাসিমা খাতুন সিএনএনকে বলেন, ‘যাত্রা শুরু করার সময় আমরা ছয়জন ছিলাম। আমরা পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়েছি। আমার স্বামী ও এক পুত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আরেক পুত্র নিখোঁজ।’

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তা জন ম্যাককেসিক বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ  রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর ‘যৌথ নিপীড়ন’ চালাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৮৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ।

সর্বশেষ খবর