গতকাল শুরু, আজ ও আগামীকাল ব্রিটিশ সংসদে ব্রেক্সিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটির মাধ্যমে কোনো এক সমাধানসূত্র উঠে আসতে পারে। তবে তার মূল্য হিসেবে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ১০ এপ্রিলের মধ্যে ফয়সালা করতেই হবে ব্রেক্সিট কীভাবে কার্যকর করবে ব্রিটেন। নাকি আদৌ পাবে না। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে চরম অচলাবস্থার পর চলতি সপ্তাহে ইইউর সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রশ্নে ঐক্য অর্জন করতে শেষ চেষ্টা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রিটিশ সরকার ও পার্লামেন্ট। এ প্রচেষ্টা বিফল হলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট অথবা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ বিলম্ব অনিবার্য হয়ে পড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। মোট কথা, দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ব্রিটেনকে তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানাতে হবে। ১০ এপ্রিল ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে সে সিদ্ধান্ত পেশ করতে হবে। ব্রিটেনের পার্লামন্টে গত সপ্তাহে এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার রাশ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ব্রেক্সিট চুক্তির মোট আটটি বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটি করেও কোনো একটির পক্ষে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তার মধ্য থেকে সম্ভবত দুটি প্রস্তাব নিয়ে গতকাল পার্লামেন্টে ফের ভোটাভুটি হওয়ার কথা। তবে এ ভোটাভুটি প্রতীকী হওয়া সত্ত্বেও কোনো একটি প্রস্তাবের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হলে সরকারের ওপর সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য চাপ বাড়বে। ইইউর শুল্ক কাঠামোয় স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা এমন ‘সহজ’ ব্রেক্সিটের ঘোর বিরোধী। তারা বরং অন্য কোনো বিকল্পের অভাবে অবিলম্বে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকরের পক্ষে। তাদের মনে এ আশঙ্কা কাজে লাগিয়ে কোণঠাসা প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আজ চতুর্থবারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনের চেষ্টা চালাতে পারেন। তবে তার জন্য স্পিকার জন বার্কোর অনুমোদন পেতে হবে। একই সংসদীয় অধিবেশনে একই প্রস্তাব বার বার পেশ করার বিরুদ্ধে তিনি এর আগেও আপত্তি তুলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মতি দিলে এবং ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদিত হলে ব্রিটেন নির্বিঘেœ ও নির্ধারিত তারিখেই ইইউ ত্যাগ করতে পারবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হলে সংসদ আইন প্রণয়ন করে তাঁকে ‘সহজ’ ব্রেক্সিট কার্যকরে বাধ্য করতে পারে। অর্থাৎ গতকাল কোনো একটি বিকল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে বুধবারই সংসদ সে সিদ্ধান্ত কার্যকরের উদ্যোগ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তেরেসা মেকে ব্রাসেলসে গিয়ে ইইউর কাছে নতুন এ বিকল্প মেনে নেওয়ার অনুরোধ করতে হবে। আবার প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হয়ে ‘সহজ’ বা ‘সফট’ ব্রেক্সিটের পথে অগ্রসর হলে সরকার ও মন্ত্রিসভার স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সানডে টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের সূত্রানুযায়ী, মন্ত্রী হিসেবে আন্দ্রেয়া লিডসম এরই মধ্যে ১০ জন মন্ত্রীর স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি প্রস্তুত করেছেন। তাতে ২২ মের পর ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে কোনোরকম বিলম্ব না চাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত নির্বাচনে ব্রেক্সিটের পক্ষে যুক্তি হিসেবে টোরি দল অন্যান্য দেশের সঙ্গে আকর্ষণীয় বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা তুলে ধরেছিল। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার রবিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ইইউ ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে ধৈর্য হারাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে এ প্রশ্নে ব্রিটেনে ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়েছেন। ডয়েচে ভেলে