শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনে গুতেরেস এরদোগান আলোচনা

যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনে গুতেরেস এরদোগান আলোচনা

ইউক্রেনের খাড়খিবে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি রাসায়নিক কারখানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইউক্রেনে শান্তির বার্তা নিয়ে আলোচনার সময় এ হামলা হয় -এএফপি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পার হলো ১৭৮ দিন। যুদ্ধ বন্ধের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। রাশিয়া ইউক্রেনের অনেক এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। প্রতিদানে ইউক্রেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুধু অস্ত্রই কিনছে। যুদ্ধ শুরুর ছয় মাস পর অবশেষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা শুরু করেছেন।

অ্যান্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের লভিভে আলোচনায় বসেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, ‘জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ তিনি এ সময় সেখানে থাকা সামরিক সরঞ্জাম ও কর্মীদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। ‘জাপোরিঝঝিয়ায় যে-কোনো সম্ভাব্য ক্ষতিসাধন হবে আত্মঘাতী,’ বলেন গুতেরেস। তাঁর এ উদ্বেগের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন এরদোগান। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আরেকটি চেরনোবিলের মতো বিপর্যয়ের আশঙ্কা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক স্থাপনা। গত মার্চে পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় পারমাণবিক কেন্দ্রটির আশপাশে ভারী গোলাবর্ষণ ঘটেছে। এজন্য কিয়েভ ও মস্কো পরস্পরকে দায়ী করছে। ভলোদিমিরি জেলেনস্কি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়ার ইচ্ছাকৃত হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। মস্কোকে ওই পারমাণবিক কেন্দ্রটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করার জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে। লভিভের বৈঠকে তিন নেতাই ওই এলাকাকে বেসামরিক জোনে পরিণত করার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওদিকে রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়া উপত্যকায় বেলবেক সামরিক বিমানবন্দরের কাছে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। তবে সেবাস্তপোলের রাশিয়ার মনোনীত গভর্নর মিখাইল রাজভোঝায়েভ বিস্ফোরণে কারও আহত হওয়া বা কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। যদিও বিস্ফোরণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়ার নির্দেশনায় ইউক্রেনের যেসব স্টাফ এখনো পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে কাজ করছেন, তারা ওই কেন্দ্র নিয়ে একটি বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে এটি ধারাবাহিকভাবে সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। টেলিগ্রামে একটি পোস্টে ইউক্রেনের একজন স্টাফ লিখেছেন, ‘যা হচ্ছে তা ভয়ংকর এবং কমন সেন্স ও নৈতিকতা বিরোধী।’ বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা টুইট করে জানিয়েছেন, রাশিয়ার কর্মকর্তারা দ্রুত পারমাণবিক কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ইউক্রেনের সেন্টার ফর ইনফরমেশন সিকিউরিটির টুইটে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন রাশিয়া ওই কেন্দ্র বিষয়ে উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তারা গোলাবর্ষণ জোরদার করার কারণে বিপদ হতে পারে এবং ইউরোপের বৃহত্তম এ পারমাণবিক কেন্দ্রে সত্যিকার অর্থেই সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।’ তবে এ দাবির সত্যতা বিবিসি যাচাই করতে পারেনি।

এসব টুইটের আগে জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব একটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের কাছে এবং এজন্য তিনি রাশিয়ার ‘দায়িত্বহীন পদক্ষেপ আর পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলিংকে’ দায়ী করেন। তবে এসব উদ্বেগ সত্ত্বেও ওই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চেরনোবিল কেন্দ্রের চেয়ে এটি অনেক বেশি নিরাপদ।

এরদোগানের যে কথায় বিস্মিত জেলেনস্কি : এর আগে খবর বেরিয়েছিল এরদোগান জেলেনস্কির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দিতে পারেন। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস ‘আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হবে’। জেলেনস্কি অবশ্য বলেছেন, মস্কো শান্তির জন্য প্রস্তুত এরদোগানের কাছে এটি শুনে তিনি ‘খুবই বিস্মিত’। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই। রাশিয়াকে দ্রুত তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’ তবে বৈঠকে নেতারা তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় খাদ্যশস্য নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তা সম্প্রসারণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার কিয়েভ জানিয়েছে, ওই চুক্তির পর ২৫তম জাহাজটি বন্দর ছেড়ে গেছে। ওদিকে খারকিভ শহরের গভর্নর জানিয়েছেন, সেখানে রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ১৭ জন নিহত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর