সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লন্ডনের পথে রানির মৃতদেহ

শেষকৃত্য ১৯ সেপ্টেম্বর

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

লন্ডনের পথে রানির মৃতদেহ

২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রিন্স ফিলিপকে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের নিচে ২০০ বছরের পুরনো রয়েল ভল্টে শায়িত করা হয়েছিল। আর সেই একই জায়গায় স্বামীর পাশে শায়িত হবেন ব্রিটেনের ইতিহাসের দীর্ঘদিনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এর পাঁচ বছর আগে ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেন তিনি। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু হলে একা হয়ে পড়েন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আর মাত্র আট দিন পর প্রিন্স ফিলিপের কাছে যাচ্ছেন রানি এলিজাবেথ- এমনটাই বলছে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম।

এদিকে রানির মৃতদেহ এখনো লন্ডনে এসে পৌঁছায়নি। তারপরও হাজার হাজার মানুষ বাকিংহাম প্যালেসে ফুল নিয়ে হাজির হচ্ছেন। শুধু বাকিংহাম নয়, রানির প্রত্যেকটি রাজপ্রাসাদের সামনে এমন ফুলের স্তূপ জমছে। একই সঙ্গে রানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন লন্ডনবাসী। আগামী মঙ্গলবার লন্ডনে আসবে রানির মৃতদেহ।

এদিকে বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে দেওয়া ঘোষণায় জানানো হয়েছে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে ১৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন ব্রিটেনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রানির কফিন ব্যালমোরাল প্রাসাদ থেকে যাত্রা শুরু করেছে রবিবার সকালে। প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার এডিনবারা বিমানবন্দর থেকে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের বিমানে কফিন এসে পৌঁছবে লন্ডনে এবং বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে সেটি নিয়ে যাওয়া হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে। ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার আগে চার দিন তাঁর মৃতদেহ সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত থাকবে, যাতে সাধারণ মানুষ রানিকে তাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে। রাজপরিবারের শেষ যে সদস্যের মৃতদেহ ২০০২ সালে এই হলঘরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাখা হয়েছিল তিনি হলেন রানির মা কুইন মাদার। তখন ২ লাখ মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। রানির কফিন রাখা হবে কিছুটা উঁচু প্ল্যাটফরমের ওপর, যাকে বলা হয় ক্যাটাফাল্ক। কফিনের প্রতিটি কোনায় পাহারায় থাকবেন রাজকীয় বাহিনী রয়্যাল হাউসহোল্ডের    ইউনিটে কর্মরত সৈন্যরা।

বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ থেকে সামরিক কুচকাওয়াজ সহযোগে ধীরগতিতে শোভাযাত্রা করে রানির কফিন নিয়ে আসা হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে। কফিনের সঙ্গে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন রাজপরিবারের সদস্যরা। রাস্তা দিয়ে যাওয়া এই শোভাযাত্রা দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। লন্ডনের রাজকীয় উদ্যানগুলোয় এই শোভাযাত্রা দেখার জন্য বসানো হবে বিশাল বিশাল পর্দা যেখানে সম্প্রচারিত হবে পুরো শোক মিছিল। রানির কফিন আচ্ছাদিত থাকবে রাজকীয় পতাকা রয়্যাল স্ট্যান্ডার্ডে এবং কফিন ওয়েস্টমিনস্টার হলে আনার পর তার ওপর বসানো হবে রাজমুকুট ইম্পিরিয়াল স্টেট ক্রাউন, রাজকীয় গোলক এবং রাজদন্ড।

এদিকে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানরা আসবেন এই শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে রাজপরিবারের সদস্যদের   সঙ্গে যোগ দিতে। রানির জীবন ও কর্মজীবনকে স্মরণ করা হবে ওই বিশেষ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ব্রিটেনের শীর্ষ রাজনীতিক এবং  সাবেক প্রধানমন্ত্রীরাও।

এখনো পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে ওয়েস্টমিনস্টার গির্জার ডিন বা প্রধান ডেভিড হয়েল এ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন। তার সঙ্গে থাকবেন ক্যান্টারবেরি গির্জার আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি, যিনি ধর্মকথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে হয়তো কিছু পাঠ করতে বলা হবে।

শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের পর রানির কফিন পদযাত্রা করে অ্যাবে থেকে নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনের কেন্দ্রে হাইড পার্ক কর্নারে ওয়েলিংটন আর্চ নামে এক ঐতিহাসিক খিলান স্তম্ভে। সেখান থেকে তাঁর কফিনবাহী শকট রওনা হবে উইন্ডসর রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে।

শেষকৃত্য অনুষ্ঠান যেদিন হবে, সেদিন বিকালেই রানির কফিন অন্তিম যাত্রা করবে তার চূড়ান্ত গন্তব্য উইন্ডসর কাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল অভিমুখে।

কফিন সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে সমাহিত করার প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আগে উইন্ডসর ক্যাসেলের চৌকনো চত্বরে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজপরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্যদের। রাজপরিবারের সদস্যরা সচরাচর সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল নামে উইন্ডসরের এই গির্জাটি বেছে নেন বিবাহ অনুষ্ঠান, সদ্যজাতের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রার্থনা অনুষ্ঠান এবং শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য। সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলের অভ্যন্তরে রাজা ষষ্ঠ জর্জের স্মৃতিসৌধ কিং জর্জ সিক্সথ মেমোরিয়াল চ্যাপেলের ভিতর রানির মৃতদেহ সমাহিত করা হবে।

সর্বশেষ খবর