বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন

সফলতায় বাধা ইউক্রেন যুদ্ধ

আজ বসছে জি-২০ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। সেই বৈঠকে থাকছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন

ভারতের দিল্লিতে বসছে জি-২০ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। সেই বৈঠকে থাকছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। ভারতে এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এত বড় বৈঠক কখনো হয়নি। যেখানে জি-২০-এর দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তো থাকবেনই, সেই সঙ্গে থাকবেন বাংলাদেশসহ ৯টি আমন্ত্রিত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। থাকবেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আরও থাকবেন ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

এ বৈঠকে আলোচনার কর্মসূচিতে কয়েকটি বিষয় আছে। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন থেকে শুরু করে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। তবে বৈঠকের আগেই রাশিয়া ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ মঙ্গলবার দিল্লি পৌঁছেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের আজ পৌঁছানোর কথা। এর মধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমেরিকা ও তার সঙ্গীরা ধ্বংসাত্মক নীতি নিয়ে চলেছে। তাদের নীতি বিশ্বকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেবে। লাভরভ ও ব্লিকেন শেষবার মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার আগে। তবে ভারতে তাদের মুখোমুখি বসার সম্ভাবনা কম। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সম্প্রতি আমেরিকার আকাশে চীনের বেলুন নিয়ে খুবই হইচই হচ্ছে। আমেরিকার দাবি, চীন নজরদারি বেলুন পাঠিয়েছিল। চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ সংঘাত জি-২০ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কোনোভাবে প্রভাব ফেলে কি না তার দিকে গোটা বিশ্বের নজর থাকবে।

কিছু দিন আগে বেঙ্গালুরুতে জি-২০ দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে যৌথ বিবৃতি নিয়ে নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার নিন্দা করা হয়েছিল। রাশিয়া ও চীন এ বিবৃতির নিন্দা করে। ফলে সর্বসম্মত কোনো বিবৃতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর প্রশ্ন উঠেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর কোনো যৌথ বিবৃতি বা প্রস্তাব নেওয়া হবে কি না। দিল্লির কয়েকটি সংবাদপত্র এ দিন তাদের রিপোর্টে বলেছে, বৈঠকের পর যৌথ প্রস্তাব বা বিবৃতির সম্ভাবনা খুব কম। ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার বালা এ প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি। তিনি বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গ আসবে। কিন্তু তার ফল কী হবে, জি-২০ সদস্যদের মধ্যে এ সংঘাতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কী কথা হবে, তা নিয়ে আগাম কিছু বলা উচিত নয়।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা জানিয়েছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। যা কর্মসূচিতেও রয়েছে। সেসব নিয়েও আলোচনা হবে। তা হলো- খাদ্য, জ্বালানি সুরক্ষা, সন্ত্রাস, মাদকসহ নতুন বিপদের কারণগুলো, গ্রিন ডেভেলপমেন্ট ও প্রযুক্তি হস্তান্তর ইত্যাদি। তার কথা থেকে স্পষ্ট, ভারত চাইছে ইউক্রেনের বাইরে অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি করে আলোচনা করতে।

এদিকে গতকাল দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা জানিয়েছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত যেভাবে মোড় নিচ্ছে তাতে এ বৈঠকে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচ্য বিষয় হবে।’

ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হলেও জোট হিসেবে জি-২০ শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছবে বা যৌথ ঘোষণাপত্র জারি করতে সফল হবে- আয়োজক তথা চেয়ার ভারতও কিন্তু সে কথাটা এখনো জোর দিয়ে বলতে পারছে না।

জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চীন ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, জি-২০-এর আলোচনায় ইউক্রেন প্রসঙ্গ ছায়া না ফেললেই ভালো। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘বালির সামিটে যেভাবে জি-২০-এর শীর্ষ নেতারা একটা ঘোষণাপত্রে পৌঁছতে পেরেছিলেন, দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেও সেরকম একটা অবস্থানে পৌঁছনোর জন্য আমরা চেষ্টা চালাব।’

সর্বশেষ খবর