নতুন করে সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে ভারতের মণিপুর রাজ্যে। সর্বশেষ গতকালের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে মণিপুরের উখরুল জেলায় এ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে ওই তিন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন দাবি করেছে।
জানা গেছে, জেলার সদর শহর উখরুল টাউন থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে থোয়াই কুকি গ্রামে ব্যাপক গোলাগুলিতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ দিন ভোরে গ্রামটিতে হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীও গুলি ছুড়ে। পরে গ্রামবাসী তিনজনের লাশ পায়।
নিহত তিনজনই কুকি সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন জামখোগিন হাওকিপ (২৬), থাংখোকাই হাওকিপ (৩৫) এবং হলেনসন বেইট (২৪)। পুলিশ সূত্রে খবর, লাশগুলোতে গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাদের গুলি করার পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতও করা হয়। উখরুল জেলার পুলিশ সুপার এন ভাসুম জানান, ‘একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত গ্রামের পূর্ব দিকে পাহাড় থেকে গ্রামে ঢুকে গ্রামরক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় ওই গ্রামের তিনজন নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনার পরেই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।’
সাড়ে তিন মাস ধরে মণিপুরে সংঘাত চলছে। এর মধ্যে গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে মণিপুর নিয়ে কথা বলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছিলেন ‘গোটা দেশ মণিপুরের জনগণের সঙ্গে আছে। কয়েকদিন ধরে মণিপুরের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য ও কেন্দ্রের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে। আমার আশা শান্তির মধ্যে দিয়েই মণিপুরে একটি সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।’ কিন্তু এরই মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।
এর আগে গত ৫ আগস্ট রাজ্যটির চূড়াচন্দ্রপুর এবং বিষ্ণুপুরে জাতিগত সহিংসতায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে তিনজন মেইতি এবং দুইজন কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন।
উল্লেখ্য, মূলত সংরক্ষণ ইস্যুকে কেন্দ্র করেই গত ৩ মে অশান্তির সূত্রপাত মণিপুরে। রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। তাদের বেশিরভাগই বসবাস ইম্ফল উপত্যকায়। অন্যদিকে রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ কুকি এবং নাগা সম্প্রদায়ের মানুষ, তাদের বসবাস বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়।
গত ৩ মে রাজ্যটির পার্বত্য জেলাগুলোতে ‘উপজাতি সংহতি মার্চ’ সংগঠিত হওয়ার পর ওই দিনই চূড়াচন্দ্রপুর টাউনে প্রথম জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। এরপর থেকেই কয়েক মাস ধরে মণিপুরে লাগাতার সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। বিশেষ করে নারীদের ওপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা, গুলির ঘটনা ঘটছে।
মণিপুরের সহিংসতায় এখনো পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর, আহত প্রায় ৩ হাজার। বাস্তুহারা প্রায় কয়েক হাজার মানুষ।